জেলেদের কাছ থেকে নেওয়া চাঁদার টাকা ফেরত দিলেন সেই ওসি
মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:০৬ পিএম, ৩ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার
সুন্দরবনে জেলেদের হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে জোর করে মুক্তিপণ আদায়ের পর অবশেষে সেই টাকার আংশিক ফেরত দিলেন ওসি রবিউল। গতকাল সোমবার জেলেদের ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলাম। এদিন খুলনা বনভিাগের বয়রাস্থ খুলনা বন সংরক্ষক কার্যালয়ের নিচে বসে চাঁদপাই বন ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সদস্য ওবায়দুলের মধ্যস্থতায় ওসি রবিউল এই টাকা ফেরত দেন। জেলেদের আটকিয়ে জোর করে নেওয়া বাকি টাকা আর ফেরত দিতে পারবে না বলেও জেলেদের জানিয়ে দেন ওসি রবিউল।
মঙ্গলবার নির্যাতনের শিকার জেলে নির্মল, আল আমিন ও আলমগীর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছেও এই স্বীকারোক্তি দেন তারা।
গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তাদের ওই ক্যাম্পে হাত পা বেঁধে পায়ের পাতায় পিটিয়ে জেলে ইয়াসির সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, শ্যামল সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, নির্মল রায়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রমেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জোর করে নেয় ওসি। এসময় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে বলে এসব জেলেদের বাড়িতে ফোন করে টাকা নেয় ওসি রবিউল। তবে সেময় ওসি রবিউল দাবি করেছিলেন, তিনি কোনও জেলেকে আটক করেনি, কোনও জেলেকে নির্যাতন করেনি এমনকি কোনও টাকাও নেয়নি।
এদিকে এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল ইসলামের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. সোহাগ সালেহ বলেন, জেলেদের কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনেছি, টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনায় মনে হয় ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশির আল মামুন বলেন, তদন্ত করে ওসি রবিউলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন ও ঢাংমারী স্টেশন থেকে বনের আভ্যন্তরীণ খালে সাদা মাছ ধরার জন্য পাশ পারমিট (বনবিভাগের অনুমতি পত্র) নিয়ে পাঁচটি নৌকাসহ তারা মাছ ধরতে যান। পরে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল এবং ওই ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশা তাদের ১০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। অবৈধভাবে বনের ভিতরে মাছ শিকারের দোহাই দিয়ে তাদের কাছে ওসি রবিউল দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এসময়। কিন্তু জেলেরা তাদের বনবিভাগ কর্তৃক পাশপারমিট দেখালে আরও ক্ষীপ্ত হন ওসি। এসময় জেলেদের পাঁচটি নৌকায় থাকা সাড়ে তিন মন কোরাল, কাইন ও জাবাসহ কয়েক প্রকার সাদা প্রজাতির মাছ ওসি রবিউল লুটে নেয় বলেও জেলেরা অভিযোগ করেন।
পরে ওই ওসি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ওসির ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে দুপুর ২টা ৩১ মিনিটে ১৫ হাজার এবং ২টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি বিকাশ নাম্বারে ১২ হাজার ২৫০ টাকা নেন। ওসির চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বাকি টাকা ভদ্রা ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশার স্ত্রীর মাধ্যমে নেন বলেও জেলেরা জানান।
একে//