ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে শিশুকে যেভাবে বোঝাবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৫৫ পিএম, ৪ মার্চ ২০২০ বুধবার

করোনা ভাইরাস যেমন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে তেমনি ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের খবর। মানুষজনের উদ্বেগ দিনকে দিন বাড়ছে। এর মধ্যে শিশুরাও রয়েছে যারা সাধারণত বাবা-মায়ের কাছেই কোন কিছু বুঝতে চায়। কিন্তু শিশুকে কিভাবে বোঝাবেন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে? তার মনে ভয় কিভাবে দূর করবেন? খবর বিবিসি’র।

আশ্বস্ত করা
ডা. পুনম কৃষ্ণা যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসক। যার নিজের ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। তিনি বলছেন, ‘বিষয়টি হল উদ্বেগ লাঘব করা। তাকে বুঝিয়ে বলা যে তোমার যখন ঠাণ্ডা লাগে, পেট খারাপ হয়, বমি হয় এই ভাইরাসটি সে রকম।’ তিনি মনে করেন, অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলাপ করা। নতুবা সে স্কুলে বা বন্ধুদের কাছ থেকে ভুল তথ্য পাবে। তার কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো গণমাধ্যমের খবর হয়ত সে সঠিকভাবে বুঝবে না। আর এতে তারই ক্ষতি।

ডা. কৃষ্ণা বলছেন, ‘সরাসরি ও সত্যি কথা বলা, আমি আমার ছেলের সাথে সেটাই করছি। আমার কাছে যারা আসছেন আমি সেসব অভিভাবকদের সেটাই করতে উৎসাহিত করছি।’

শিশুদের মনোবিজ্ঞানী ডা. রিচার্ড উলফসন মনে করেন, শিশুদের বয়সের উপর নির্ভর করবে তার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে। তিনি বলছেন, ‘ছয়, সাত বছর বয়সী বা তাদের নিচে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা হল তারা যা শুনবে তাতেই বিচলিত হবে। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা তাদের আশ-পাশেই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করছে।’

তিনি বলছেন, ‘এটা তাদের জন্য ভীতিকর হতে পারে। প্রথমত ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে তাদেরকে আশ্বস্ত করুন। আপনি হয়ত জানেন না কী হতে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের বলুন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া
ডা. উলফসন স্বীকার করছেন যে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে তার শিশু এতে আক্রান্ত হবে কিনা। কিন্তু অকারণে ঝুঁকি সম্পর্কে দু:শ্চিন্তা না করে আশাবাদী থাকাই ভাল। তিনি বলছেন, ‘শুধু আস্বস্ত করা নয়, রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে তাদের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।’

তাদের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। যাতে করে তারা নিজেদের আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে এবং একই সাথে এমন অনুভব করে যে এর মাধ্যমে সে নিরাপদ এবং বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘আমাদের উচিৎ স্বাস্থ্য ভাল রাখার কিছু উপায় আছে যা তুমি করতে পারো। যেমন নিয়মিত হাত ধোয়ার বিষয়টা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে শুধু এটা বলে বসে না থেকে তারা নিজেরা করতে পারে এমন কিছু তাদের করতে দেয়া ভাল।’

তার সাথে একমত পোষণ করে ডা. কৃষ্ণা বলছেন, ‘নিজেকে রক্ষা করার প্রতিরোধী কাজগুলো যেমন শিশুর সঙ্গে হাত ধোয়ার মতো বিষয়টি নিয়ে গল্প করা।’

শিশুকে আস্বস্ত করা এবং একই সাথে কিছু বাস্তবসম্মত প্রতিরোধমূলক কৌশল শেখানোই হবে অভিভাবকদের জন্য সবচাইতে ভাল পরামর্শ। শিশুরা অন্যমনস্ক হতে পারে, খেলায় ব্যস্ত হয়ে যেতে পারে বা তার মনোযোগ কম হতে পারে তাই তাকে মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়া।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
তবে পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুদের মনে করিয়ে দেয়ার বিষয়টি শুধু উদ্বেগ প্রশমনের সাথে সম্পর্কিত নয়। ছোট শিশুরা খুব কৌতূহলী হয়। তারা সবকিছু ছুঁয়ে দেখে। স্কুলে বন্ধুদের সাথে খাবার ও পানীয় আদান প্রদান করে।

ডা. কৃষ্ণা বলছেন, ‘সাধারণত এটি রোগ জীবাণু ছড়ানোর অন্যতম কারণ। তাদেরকে পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া মানে চারপাশের মানুষজনকেও নিরাপদে থাকতে সাহায্য করা।’

ভুয়া খবর থেকে সতর্ক থাকুন
শিশুদের উদ্বেগের অন্যতম উৎস হতে পারে তাদের অভিভাবকরাই। তিনি বলছেন, ‘অপেক্ষাকৃত ছোটরা যদি দেখে তাদের বাবা-মায়েরা নিজেরা উদ্বিগ্ন, তারা তাদের নানা ধরনের আলাপচারিতা শোনে এবং সেখান থেকে নিজেদের তথ্য সংগ্রহ করে।’ 

তিনি বলছেন, ‘বাবা-মায়েরা শিশুদের আশপাশে কেমন আচরণ করবেন সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ। কিন্তু তারা স্কুলে কী শুনছে সেটির উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব মুশকিল।’

ডা. উলফসন বলছেন, ‘আমার তিনজন নাতি রয়েছে। তাদের বয়স বারো, দশ ও আট বছর। তারা প্রত্যেকে এসে আমাকে বলেছে, আমি শুনেছি আমাদের স্কুলে একজন এসেছে যে অন্য কোথাও গিয়েছিল। তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কারণ ওদের ওটা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে কত দ্রুত গল্প ছড়ায়। সত্যি কথা বলা শেখানো খুব জরুরি।’

কিশোর বয়সীদের যেভাবে বোঝাতে পারেন
এই বয়সীদের জন্য বিষয়টা বেশ অন্যরকম। তারা খবরের জন্য অভিভাবকদের উপর কম নির্ভরশীল। তারা বন্ধুদের কাছ থেকে বেশি খবর পায়। তথ্য আদান প্রদানে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে।

ডা. উলফসন বলছেন, ‘তথ্যের ব্যাপারে তারা তাদের বন্ধুদের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। সমস্যা হল কিশোর বয়সী কাউকে এটা বলে আস্বস্ত করা যাবে না যে সবকিছু ঠিক হয় যাবে। এই বয়সীরা অভিভাবকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে তর্ক করতে পারে। তারা বাবা-মা বললেই সবকিছু মেনে নেবে না।’ তবে তার মতে বয়স যতই হোক না কেন শিশুরা যাতে পরিবারে সবকিছু আলাপ করতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করাই মঙ্গল।

এমএস/এসি