৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণা: রাষ্ট্রপতি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ৭ মার্চ ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:০৭ এএম, ৭ মার্চ ২০২০ শনিবার
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল বাঙালি জাতির নয়, বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।’ তিনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আগামীকাল ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি দিন। এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অনন্য-সাধারণ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন, তবে তা একদিনে অর্জিত হয়নি উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিক-নির্দেশনা জাতিকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর ওই ভাষণে জাতির মুক্তির আকাঙ্খাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক।
তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, বাঙালি জাতির বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা। তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম এ কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তিকামী জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ঐ ভাষণ ছিল এক মহামন্ত্র। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেস্কো’ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’র মর্যাদা দিয়ে মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে এটি আমাদের বড় অর্জন। এ ভাষণের কারণে বিশ্বখ্যাত নিউজ উইক ম্যাগাজিন ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে পোয়েট অব পলিটিক্স হিসেবে অভিহিত করে। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল আমাদের নয়, বিশ্ববাসীর জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।’
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’য় পরিণত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন-এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন,‘আমাদের মহান নেতার সে স্বপ্ন পূরণে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম-শতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপিত হবে। এছাড়া ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-৪১’ ঘোষণা করেছেন।’ রাষ্ট্রপতি এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
সূত্র: বাসস
এমএস/