ঢাকা, শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ১৯ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণ: আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস

ড. এ কে আবদুল মোমেন

প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ৭ মার্চ ২০২০ শনিবার

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ন’মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বহুদিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতি লাভ করে স্বাধীনতার স্বাদ। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার রঙে রাঙিয়েছেন যে মহামানব তিনি আর কেউ নন, এ দেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, বাংলার গণমানুষের মুক্তির উপলক্ষ, মহান স্বাধীনতার রূপকার, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অনেকটা নিরস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তারই ডাকে। বজ্রকণ্ঠে তিনি মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনতার বিশাল জনসমুদ্রের সামনে এসে বঙ্গবন্ধু শোনান মুক্তির বাণী। আগুনঝরা কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এ অমোঘ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যে মহাকাব্য তিনি রচনা করেন সেদিন রেসকোর্স ময়দানে, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে আজ তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। গোটা বিশ্বের নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত মানুষের মুক্তির দিশা আজ তালাশ করা হয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালি জাতির এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন- যে ভাষণ থেকে একটি জাতি দিকনির্দেশনা পায়, জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও স্বতন্ত্র জাতিসত্তা বিনির্মাণে উদ্বুদ্ধ হয়, এমনকি প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনতে পারে বিশ্বের মানচিত্রে। এ ভাষণ অনন্য, অজর।

বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ দৃঢ়তা, সম্মোহনী ও তেজস্বী বাগ্মিতা, দূরদর্শিতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা, পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয়তার নিরিখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সক্ষমতায় এ ভাষণ ছিল ব্যতিক্রমী। এ ভাষণ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে এক পতাকাতলে সমবেত করে। ১৯ মিনিট স্থায়ী ৭ মার্চের এ ভাষণে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। মূলত প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণাও ছিল এটি।

১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন। বাকি দুটি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জেডএ ভুট্টো এবং পাকিস্তানের সামরিক দুষ্টচক্র সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। একে একে আলোচনার সব দুয়ার রুদ্ধ হয়ে আসে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। দেশজুড়ে মুক্তিকামী জনতা ফুঁসতে থাকে প্রবল রোষে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মূলত সেসব মুক্তিকামী মানুষের অন্তরেরই অভিব্যক্তি। বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ ভারি গলায় ঘোষণা করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না!’ তিনি ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। তবুও এই দেশকে স্বাধীন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধুর এমন উচ্চারণে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা রেসকোর্স। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চৌদিক। প্রশস্ত হয় স্বাধীনতার পথ এ ভাষণের প্রতিটি শব্দে শব্দে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিতকরণের হাতিয়ার। এ ভাষণের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই কোনো ধরনের আপসের পথে না গিয়ে নিরস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবেলা করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করেন, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। একটি ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে সেই ঘটনাও বিশ্ব
ইতিহাসে বিরল।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বৈশিষ্ট্য ছিল নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্মবোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। যার মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ ও কৌশলী। পৃথিবীর বহু সমাজবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ করেছেন। এ ভাষণ বিশ্ব সম্প্রদায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিল। লন্ডন থেকে প্রকাশিত Sunday Times এ ভাষণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে A poet of politics আখ্যায়িত করেন।

লন্ডনের অবজারভার পত্রিকার তখনকার বিখ্যাত কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরিল ডান বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছেন, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নেতা এলেন, যিনি চারিত্রিক, নৃতাত্ত্বিক, ভাষা, পোশাক-আশাক, গায়ের রং, আচার-আচরণে একজন নিখুঁত বাঙালি। তার বজ কণ্ঠের ঘোষণা দেশের মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনে এবং মান্য করে।

১৯৭৪ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ভ্যাকব্রাইড বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগোলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি, অর্থনৈতিক দৈন্য কাটিয়ে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে।’

ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তার সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবী স্বীকার করবে।’ পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা, অন্যদিকে আছে স্বাধীনতা-পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা।’

কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধু ভাষণ নয়, এটি একটি
অনন্য রণকৌশলের দলিল।’ গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চিরজাগরূক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী। কাব্যিক গুণ, শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস অনন্য। দারুণ গতিময় এর প্রতিটি শব্দমালা। যে কোনো শ্রেষ্ঠ ভাষণই উত্থিত হয় বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে; ফলে তা তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয় উৎসারিত বলা যায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল তাই, যা লিখিত ছিল না। ১৯ মিনিটের এ ভাষণের প্রতিটি শব্দ ছিল তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নিসৃত।

১৮৬৩ সালে আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ‘Gettysburg' Address-এর শব্দ সংখ্যা ২৭২, সময় ৩ মিনিটের কম। ভাষণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও লিখিত, যা ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অপরদিকে আফ্রো-আমেরিকান মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের ‘I have a dream' Address-এর সময়কাল ছিল ১৭ মিনিট, শব্দ সংখ্যা ১৬৬৭।

ভাষণটির প্রথমাংশ লিখিত ও পঠিত, যার শ্রোতার সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল ১৯ মিনিটব্যাপী, শব্দ সংখ্যা ১১৩৫। এটি ছিল তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অলিখিত। অথচ এ ভাষণের প্রতিটি শব্দ নির্বাচন করা হয়েছিল অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনের নিরিখে। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য যে আকাঙ্ক্ষা তিনি লালন করতেন ভেতরে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল মূলত তারই বহিঃপ্রকাশ।

সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সামনে আসে। সেগুলো হল- ১. বাঙালির সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও বঞ্চনার ইতিহাস, ২. গণতান্ত্রিক চেতনা, ৩. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, ৪. শান্তির বাণী, ৫. মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা, ৬. আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কৌশলী উপস্থাপনা- স্বাধীনতার ডাক দিয়ে চারটি শর্তজুড়ে দিয়ে আইনি মারপ্যাঁচে এ একটা বিশেষ উপস্থাপন। ফলে তাকে দেশদ্রোহী বলা যাবে না।

তবে বাঙালি জাতির কাছে এ ছিল ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ বা দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার ডাক দিয়ে একদিকে যেমন সংযমী, অন্যদিকে তেমনি সংগ্রামী এর মূল ভাব। ১৯৭১-এর পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ প্রদান করে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। গবেষণা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকেও ঠাঁই পেয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এ ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

৭ মার্চের ভাষণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল এর সার্বজনীনতা ও মানবিকতা। যে কোনো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য এ ভাষণ সবসময়ই আবেদনময়। এ ভাষণে গণতন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধিকার, মানবতা এবং সব মানুষের কথা বলা হয়েছে। ফলে এ ভাষণ দেশকালের গণ্ডি ছাড়িয়ে হয়েছে সার্বজনীন। বিশ্বজনীনতা ও মানবিক গুণের কারণেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়েছে। তিনি যে অধিকারের কথা বলেছেন, তা সারা বিশ্বের সব মানুষের অধিকার। সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কথা, স্বাধীনতাবঞ্চিত মানুষের কথা বলেছেন তিনি তার ভাষণে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মানুষের সার্বজনীন অধিকার।

বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা সংখ্যায় মেজরিটি, কিন্তু একজন মানুষও যদি ন্যায্য কথা বলে আমরা তা মেনে নেবো।’ এর চেয়ে আর বড় কোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হতে পারে না। তিনি বলেছেন, এ বাংলায় হিন্দু বা মুসলমান, বাঙালি বা অবাঙালি সবাই এ দেশের সন্তান, তাদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব হল জনগণের। তিনি পার্টির নেতাকর্মীদের বলেছেন, আমাদের যেন বদনাম না হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস। পৃথিবীতে সম্ভবত অন্য কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য।

এ ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। এ ভাষণ ছিল বহুমাত্রিকতায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল ৭ মার্চের এ ভাষণ। গণতন্ত্র, উচ্চমানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম, জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা জোগাবে মুক্তিকামী মানুষের মিছিলে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রয়ে যাবেন বাঙালি জাতির তথা সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মনের মণিকোঠায়।

ড. এ কে আবদুল মোমেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার