ঝালকাঠিতে বিসিক প্লটে আগ্রহ নেই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:১৯ পিএম, ৭ মার্চ ২০২০ শনিবার
ঝালকাঠিতে এক বছর আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার পর দেড় বছর অতিবাহিত হলেও চড়া মূল্যের কারণে প্লট বরাদ্দের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জেলার ঢাপড় এলাকায় গড়ে তোলা শিল্পনগরীটি উদ্বোধনের পূর্বেই সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারীদের নামে দুদকের ৩টি মামলা এ প্রকল্পের গায়ে কালিমা লেপন করেছে।
এখন বিসিক কর্তৃপক্ষ ‘উন্নয়ন খরচ বেশি হওয়ার’ অজুহাতে প্লটগুলোর চড়া মূল্য নির্ধারণ করায় স্থানীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর অতিবাহিত হলেও মাত্র একটি কোম্পানি ছাড়া কোন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহ দেখায়নি।
তবে এসব সমস্যা কাটিয়ে শিগগরই সকল প্লট বরাদ্দসহ ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীটি জমে উঠবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
শহরের প্রবেশ মুখেই ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক সড়কের পাশে ঢাপড় এলাকায় প্রায় ১২ একর জমিতে ২০১৪ সালে বিসিক শিল্প নগরী নির্মাণ কাজ শুরু হলে ভূমি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রায় ৪ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও দুদকের তদন্তে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয় প্রমাণিত হলে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়।
পরবর্তীতে উন্নয়ন কাজ শেষে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল প্লট বরাদ্ধ নিতে আগ্রহীদের আবেদন জমা দেয়ার শেষ সময় ঘোষণা করলে মোট ৭৯টি প্লটের অনুকূলে মাত্র ১১টি আবেদন পড়ে। এরমধ্যে বাছাই পর্বে মাত্র ৬টি আবেদন টিকলেও জমির শতাংশ প্রতি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করায় মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান তাদের অনুকূলে শিল্প ইউনিট প্লট বরাদ্দ নেয়।
বিসিক কর্তৃপক্ষ তিন শ্রেণীর প্লটের প্রতি বর্গফুট ৬শ' টাকা হারে ৬ হাজার বর্গ ফুটের প্লটের মূল্য ৩৬ লাখ, ৪ হাজার ৫শ বর্গফুট প্লটের মূল্য ২৭ লাখ ও ৩ হাজার ২শ বর্গফুট প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে স্থানীয় অকিবহল একাধিক সূত্র জানায়, আমরা এতদিন জেনে এসেছি সরকার স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কলকারখানা তথা উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ-পানিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্বল্প খরচে প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।
অথচ দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে ঝালকাঠি বিসিক শিল্প নগরীর প্লটের মূল্য স্থানীয় জমির বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা এখানের জমি বা প্লট কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন খরচ বেশি হওয়ায় এখন তার মাসুল দিতে হচ্ছে প্লট নিতে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝালকাঠি বিসিক কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন খরচ বেশির হওয়ার অজুহাতে বরিশাল শিল্প নগরীসহ আশে পাশের জেলার শিল্পনগরীগুলো অপেক্ষা প্লটের চরা মূল্য নির্ধারণ করায় ক্ষুদ্র বা মাঝারি উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের আলোচনা, বর্তমান বাজার মূল্য বিবেচনায় রেখে প্লটের মূল্য পুনঃনির্ধারণ ও প্লটের অনুকূলে ব্যাংক সহায়তা পেলে দ্রুতই এ সংকট কাটিয়ে ‘ঝালকাঠিবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বিসিক শিল্প নগরী’ প্রাণ ফিরে পাবে বলে মন্তব্য করেছেন এসব ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
জানতে চাইলে ঝালকাঠি বিসিক এর উপ-ব্যবস্থাপক শাফাউল করিম জানান, ‘জমির পরিমাণ কম সেই সাথে উন্নয়ন খরচ বেশি হওয়ায় প্লটের দামে প্রভাব পড়েছে। এখন পর্যন্ত একটি কোম্পানি প্লট বরাদ্দ নিয়েছে এবং আও ৪টি আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে। তবে পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর চালু হলে শিগগিরই বিসিক শিল্প নগরী জমে উঠবে।’
এআই/