ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

বাড়ছে করোনার প্রকোপ, মৃত বেড়ে ৩৫৭০

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩০ এএম, ৮ মার্চ ২০২০ রবিবার

আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনার প্রকোপ। যেখানে চীনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়া। 

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানি এক নারী এমপিসহ ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে করোনায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ৩ হাজার ৭০ জনই চীনা নাগরিক। তবে, একদিনে চীনে করোনায় কোনো মৃতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আক্রান্ত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০০ নাগরিক।  

একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের হার। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজারে পৌঁছেছে। 

আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও দেড় হাজারের বেশি মানুষ। যেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় প্রকোপ থেকে মুক্তি মিলেছে প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের।

আজ রোববার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। 

চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গোটা শহরজুড়ে প্রতিষেধক ছেটানো হলেও কোনোভাবেই থামছে না প্রকোপ। সেখানে এখন পর্যন্ত অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। 

অপরদিকে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। প্রথম দিকে তেহরান এগিয়ে থাকলেও এক সপ্তাহের মাথায় ছাড়িয়ে যায় রোম। সেখানে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩৩ জন নাগরিক।

অপরদিকে, শত প্রচেষ্টার পরও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে নিয়ন্ত্রণে আসছে না করোনা ভাইরাস। দেশটিতে নতুন করে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ফাতেমেহ রাহবার নামের ওই নারী এমপিও রয়েছেন। সদ্য পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

এর আগে পার্লামেন্ট সদস্য মোহাম্মদ আলি রামাজানি দস্তকও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেইসঙ্গে এক সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টার মৃত্যু হয় করোনায়। 

এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এখন ১৪৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজারের বেশি নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিরে ৫ হাজার ৮৮৩ জন নাগরিক করোনায় ভুগছেন। 

জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরও একজন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হল। অপরদিকে, জাপানের বিভিন্ন স্থানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

ফ্রান্সে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ইউরোপের দেশটিতে করোনার ছোবলে নতুন করে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে পৌঁছেছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত ৯৪৯ জন। 

জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ৬৩৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। স্পেনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা  ৩৭৪ জন। মারা গেছেন আরও ৫ জন। এ নিয়ে সেখানে করোনায় ৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।  

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২১৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন আরও ৫ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৯ জনে পৌঁছেছে। নিউ ইয়র্কে এখন পর্যন্ত ৮৯ জন আক্রান্ত। এতে করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। 

সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮, হংকংয়ে ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে ২ জন, সুইজারল্যান্ডেও বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে রোববার সকাল পর্যন্ত ১৮১ আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১ জন। 

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত প্রথমবারের একজনের মৃত্যু হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৩০ জন। নরওয়েতে ৮৬, কুয়েতে ৫৬, বাহরাইনে ৫২, সুইডেনে ৫২, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০, মৃত্যু ২, মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত ৯৩, থাইল্যান্ডে ৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ১ জন মারা গেছে।

অপরদিকে, তাইওয়ানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ এবং মৃত্য ১, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১৮৮, মারা গেছেন একজন, ইরাকে আক্রান্ত ৩৫ এবং মৃত্যু ২, কানাডায় আক্রান্ত ৪৫, অস্ট্রিয়ায় ৪৭, ভারতে ৩০, আরব আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ২৬, বেলজিয়ামে ১০৯, আলজেরিয়ায় ১৭, সান মেরিনোতে আক্রান্ত ২১ এবং মৃত্যু ১, ভিয়েতনামে আক্রান্ত ১৬, ডেনমার্কে ১৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

অপরদিকে, ইসরাইলে আক্রান্ত ১৫, লেবাননে ১৫, ওমানে ১৫, ম্যাকাউতে ১০, ক্রোয়েশিয়ায় ১০, ইকুয়েডরে ১০, গ্রিসে ৯, কাতারে ৮, ফিনল্যান্ডে ৭, বেলারুসে ৬, আয়ারল্যান্ডে ৬, মেক্সিকোতে ৬, পর্তুগালে ৬, রোমানিয়ায় ৬, পাকিস্তানে ৫, সেনেগালে ৪, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৩ এবং মৃত্যু ১, আজারবাইজানে আক্রান্ত ৩, ব্রাজিলে ৩, জর্জিয়ায় ৩, নিউজিল্যান্ডে ৩, রাশিয়ায় ৩ এবং চিলিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩।

মিসরে আক্রান্ত ২, এস্তোনিয়ায় ২, ইন্দোনেশিয়ায় ২, সৌদি আরবে ২, হাঙ্গেরিতে ২, আফগানিস্তানে ১, আন্দোরে ১, আর্মেনিয়ায় ১, কম্বোডিয়ায় ১, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ১, জর্ডানে ১, লাটভিয়ায় ১, লিথুনিয়ায় ১, লুক্সেমবার্গে ১, মোনাকোতে ১, মরক্কোতে ১, নেপালে ১, নাইজেরিয়ায় ১, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ১, সান মেরিনোতে ১, সৌদি আরবে ১, শ্রীলঙ্কায় ১, তিউনিসিয়ায় ১ এবং ইউক্রেনে ১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করেছে সৌদি আরব।

আর করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে সাময়িক সময়ের জন্য বাংলাদেশসহ সাতটি দেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কুয়েত। অন্যান্য দেশগুলো হলো- ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিপাইন, সিরিয়া ও মিশর।

তবে আশার কথা হল, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি মরণঘাতি এ ভাইরাসটির সন্ধান মিলেনি। বাগেরহাটে তিন পর্যটককে করোনার আশঙ্কায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এআই/