৩৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় পিএইচপি’র নতুন ঢেউটিন কারখানা
রফিকুল বাহার
প্রকাশিত : ০৯:৫৩ পিএম, ৮ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৯:৫৪ পিএম, ৮ মার্চ ২০২০ রবিবার
দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে বিশেষায়িত এক স্টিল কারখানা গড়ে তুলেছে। ৩৩ লাখ বর্গফুটের এই কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা।
এই কারখানায় উৎপাদিত ঢেউটিনের গুণগতমান দেশের অন্যান্য কারখানা থেকে আলাদা। উৎপাদিত এ ঢেউটিনের স্থায়িত্ব বেশি, দেখতে উজ্জ্বল, দামও তুলনামূলক কম। জিংক কোটেড সাধারণ ঢেউটিনের চেয়ে এ্যালুমিনিয়াম কোটেড নতুন এ ঢেউটিনের দাম টনপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা কম।
এ প্রসঙ্গে পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল বলেন, ‘চলতি বছরের আগস্ট মাসে উৎপাদনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে বাজারে উৎপাদিত ঢেউটিন বাজারজাত করা হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে এ ঢেউটিনের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তারা নিজেরাই এর নাম দিয়েছে ‘হোয়াইট গোল্ড’। কারণ এটি দেখতে সাধারণ টিনের চাইতে বেশি চকচক করে। জিংক ছাড়াও এতে উজ্জ্বল্য বাড়ানোর জন্য এতে বিশেষধরনের প্রলেপ ব্যবহার করা হয়। যার নাম হলো এ্যালুমিনিয়াম কোট।’ তিনি জানান, এই কারখানার সমস্ত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি বাংলাদেশ এমনকি ভারতেও কারো কাছে নেই।
ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এ কারখানা। এখানে প্রতি মিনিটে ১৮০ মিটার ঢেউটিন উৎপাদন করা যাবে- যা দেশের সর্বোচ্চ। প্রতিদিন ৪০০ টন অর্থাৎ বছরে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ঢেউটিন উৎপাদনক্ষমতা পিএইচপি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল মিলস লিমিটেডের। এটি পিএইচপি ফ্যামিলির দ্বিতীয় ঢেউটিন কারখানা। প্রথম কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ২২ বছর আগে সীতাকুণ্ড থানার কুমিরায়।
দেশে বিভিন্ন স্থাপনা ও ঘরবাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এসব ঢেউটিন। বছরে বাংলাদেশের ঢেউটিনের চাহিদা হলো আনুমানিক ১২ লাখ মেট্রিক টন। এ খাতে লেনদেন হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আবুল খায়ের গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও পিএইচপি গ্রুপই ঢেউটিনের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। এদের সবার কারখানায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও পটিয়া উপজেলায়। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হবে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
ঢেউটিন তৈরির কাঁচামাল আমদানি করা হয় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, চীন, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। আমদানি করা একেকটি হটরোলের ওজন প্রায় ১৫ টন। এসব হটরোলকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ঢেউটিনে রূপান্তর করার জন্য অতিক্রম করতে হয় ৬টি ধাপ। ফেনীর নিকুঞ্জরায় অবস্থিত পিএইচপির নতুন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষ-অদক্ষ প্রায় একহাজার কর্মী কাজ করছে। তিন বছর আগে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগে শেষ করে উৎপাদনে যেতে সক্ষম হয়েছে।
ইট, বালি, সিমেন্ট ও টাইলস দিয়ে নতুন বাড়িঘর ও স্থাপনা বানানোর প্রবণতা বাড়ছে দেশে। এরপর ঢেউটিন কারখানার প্রয়োজনীয় রয়েছে কি-না জানতে চাইলে পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত দেশ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে ঢেউটিন তৈরির অনেক কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শেড ও নতুন স্থাপনা তৈরি করতে ঢেউটিনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে পৃথিবীর উন্নত দেশেও। আমাদের দেশে ঢেউটিনের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার বাজার বিস্তৃত করতে হবে ভবিষ্যতে। প্রতিবেশি দেশ ভারতের সেভেন সিস্টারেও বাংলাদেশের ঢেউটিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
আরকে//