ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কাপড়ের মাস্কও বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪৪ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০ বুধবার

ছবি: একুশে টেলিভিশন

ছবি: একুশে টেলিভিশন

অল্পদিন আগের কথা, যে মাস্ক বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচ টাকা দামে, আজ সেই মাস্কের দাম হাকানো হচ্ছে ২০ টাকা। আবার যে মাস্ক পাওয়া গেছে মাত্র দশ টাকায় সেটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫টাকায়। অনেক স্থানে এ দাম দিয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা হাতে তৈরি কাপড়ের মাস্ক। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চাহিদা বেশি থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর মিডফোর্ড ওষুধ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, ফার্মেসিগুলোতে মাস্ক নেই। বেশিরভাগ ফার্মেসির প্রবেশদ্বারে সেটে দেওয়া হয়েছে এখানে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায় না। তবে গুটিকয়েক দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া গেলেও অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

শুধু মিডফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেটেই নয়, একই অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর শাহবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায়।

অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাস্কের প্রচুর চাহিদা। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মাস্ক আমদানি হতো চায়না থেকে। সে দেশে করোনা সংক্রমণের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশে মাস্ক আমদানি কমে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মাস্কের চাহিদা রয়েছে। ফলে মাস্ক বাজার থেকে উধাও।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে যারা মাস্ক উৎপাদন করে তাদের একটি বড় অংশ পাইকাররা কিনে বেশি দামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে। এ কারণে তিন টাকার দামের একটি মাস্ক ২০-৩০ টাকায় পাইকারি কিনতে হয়। বেশি দামে কিনে আবার বেশি বিক্রি করলে জেল-জরিমানার ভয়ে অনেক ফার্মেসি মালিক মাস্ক বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।

এদিকে বাজারে হাতে তৈরি দেশিও কাপড়ের মাস্কের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব মাস্ক যারা তৈরি করেন তারা চাহিদার তুলোনায় উৎপাদন করতে পারছেন না বলেই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান।

সরেজমিনে রাজধানীর হাসনাবাদ এলাকায় গড়ে ওঠা এমনই কিছু কাপড়ে তৈরি মাস্কের কারখানায় গেলে তারা জানান, চাহিদা বেশি। কিন্তু সে তুলোনায় দেওয়া যাচ্ছে না। তাই দাম বেড়েছে। তারা এ ডজন কাপড়ে তৈরি মাস্ক পাইকারি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা দরে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিপিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

অপরদিকে শান্তিনগর এলাকায় খুচরা ওষুধ ব্যবসায়িরা বলেন, ‘আমাদের এখানে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারজাতীয় কিছু নেই। রবিবার করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্তের বিষয়টি ঘোষণা দেওয়ার পর সেদিনই সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা কোম্পানিতে অর্ডার দিয়েছি, কিন্তু পাচ্ছি না। তবে মাস্কের দাম বেশি দেখে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রেখেছি।’

 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিক অভিযানে নামে র‌্যাব-২। অভিযানে বেশ কয়েকটি ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়। রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় এ অভিযানে নরসিংদী ফার্মাকে দুই লাখ, মেডিকাসকে দুই লাখ, রয়েল ফার্মাকে এক লাখ, রোগ মুক্তি ফার্মাকে এক লাখ, ওষুধ বিতানকে এক লাখ, অজুয়া ফার্মেসিকে ৫০ হাজার, নাজ ফার্মাকে ৫০ হাজার, গ্রিন লাইফকে এক লাখ, এসএইচ ফার্মাকে ৫০ হাজার এবং নিরাময় ফার্মাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

প্রসঙ্গত, চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটিতে মাস্কের চরম সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশ থেকে চীনে মাস্কসহ বিভিন্ন সামগ্রী পাঠানো হয়। বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের বিমান, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং শুরু করা হয়। দেশের মানুষ করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করে। তখন থেকে বাজারে মাস্কের সংকট দেখা দেয় এবং ফার্মেসিগুলোতে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি শুরু করে। মাস্ক সংকটের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরে এলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি, মেডিক্যাল ডিভাইস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও ডায়াগনস্টিকস রি-এজেন্ট অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্টস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং ওষুধ উৎপাদনকারী ও মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- গেটওয়েল লিমিটেড এবং হ্যালো ইউ বিডিকে নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ডিসপোজেবল ফেসমাস্কের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ইনসেপ্টা, স্কয়ার ও জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কী পরিমাণ ফেসমাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার মজুদ আছে তা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফেসমাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভসের আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে। অ্যান্টিভাইরাল মেডিসিনের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এসএ/