ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

নোয়াখালীর ওষুধ বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০ বুধবার

নোয়াখালীর ওষুধ বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রায় ওষুধে সমিতির নামে তারা ইচ্ছেমতো ও মনগড়া নৈরাজ্যমূল্য আদায় করছে। 

অভিযোগ ওঠেছে, এমআরপি নামে নিজস্ব ও  মনগড়া সীলমোহরে দাম বসাচ্ছে তারা। আবার কোন ফার্মেসী মালিক এ নিয়ে কোন ধরনের বাদ প্রতিবাদ করলে সমিতির নোতারা তাকে শাসিয়ে দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ অবস্থায় জটিল ও কঠিন রোগের শিকার হওয়া সাধারণ মানুষ ছড়া দামের ওষুধ কিনতে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

নোয়াখালীর বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্টিকসহ বেশকিছু ওষুধের প্রতিপিসে দাম বেড়েছে। গত একমাসের মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই গড়ে প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম বাড়িয়েছে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত। পেভিশন নামের একটি মলমই এখন ৫৫ টাকার স্থলে ৮০ টাকার নীচে পাওয়া যায়না। 

হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মুলতানুর রহমান বলেন, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দেয়া হলেও বেশির ভাগ ওষুধের দাম গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। কোনো কোনো ওষুধের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এ সময়ে কাঁচামালের দাম বেড়েছে এর চেয়ে অনেক কম। 
নোয়াখালী পৌরসভার রামশংকর পুরের মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাদ্য-বস্ত্রের মতো চিকিৎসাসেবাও মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে এ চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে ব্যক্তি অর্থে সেবা কিনতে বাধ্য হয়। কিন্ত সেখানেও যদি শৃঙ্খলা না থাকে তবেই বাঁধে বিপত্তি।

ওষুধের দাম বিরতিহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নেমে আসছে ভোগান্তি ও রোগের যথাযথ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করার অনিশ্চয়তা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধের বাজারে মূল্য দেখভালে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। 

তবে জেলার ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রোকনুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেয়ে এর আগে অনেকগুলো ফার্মেসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। 
স্বাস্থ্য সচেতনরা বলছেন, ওষুধের মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ের মূল্য নির্ধারণে সরকারের একক হস্তক্ষেপ থাকা প্রয়োজন। যদিও ওষুধ নীতিতে উৎপাদকদের মূল্য নির্ধারণে সুযোগ দেয়া হয়েছে।

তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দেশের ওষুধ নীতিমালা সংশোধন করে সব ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে তুলে দেয়া সম্ভব। আর এই প্রথা চালু হলে দেশের ওষুধের বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। খুচরা বাজারে দাম কমে আসবে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ।
তবে সমিতির নেতারা বলেছেন, ওষুধের অযৌক্তিকভাবে কোনো দাম বাড়েনি।  নোয়াখালী শহরে ওষুধ বিক্রেতা সমিতির নেতা মোতাহের হোসেন রাজু এমআর ফির বেশি নিচ্ছেননা বলে দাবি করেছেন। 

তিনি বলেন, মাঝখানে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় একবার সামান্য দাম বেড়েছিল। এর বাইরে তেমন দাম বাড়েনি। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলছে। বছর বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামান্য দাম বাড়ে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বিশ্ববাজারে ওষুধের কাঁচামালের দাম কমলেও দেশে কখনো ওষুধের দাম কমতে দেখা যায়নি। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুস সাত্তার ফরায়েজী বলেন, সরকারের মদদে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সাধারণ মানুষের সাথে ছিনিমিনি খেলছে। গ্যাস্টিক উপশমে ব্যবহৃত ওমিপ্রাজল গ্রুপের একটি ওষুধ উৎপাদনে ৬০ পয়সা ব্যয় হয়। কিন্তু এটি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। সব ওষুধই উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ওষুধের বাজার নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এই নৈরাজ্য চলছে। সরকারও এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছে।
জেলার সচেতন নাগরিকেরা মনে করেন, ১৯৮২ সালের নীতিমালা অনুসারে সব ওষুধের দাম নির্ধারণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর হস্তক্ষেপ করলেই ওষুধের বাজার স্থিতিশীলতা ফিরবে। এছাড়া কোনোভাবেই ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

জানা যায়, ১৯৮২ সালে সরকারের ওষুধ নীতিমালাটি মূলত জনবান্ধব ছিল। সেখানে ১১৭টি ফর্মূলায় ওষুধ তৈরি ও মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও মুনাফার আশায় দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ওষুধের প্রচারণা বন্ধ করে দিয়ে নতুন নতুন মিক্সড মলিকুলার ওষুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে সেগুলোতে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে শুধু ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবহিত করেই নিস্তার পাচ্ছে।

কেআই/আরকে