আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিন
বাণিজ্যে দক্ষীণ এশিয়ার অন্য দেশের চেয়ে ভাল করছে বাংলাদেশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:২৫ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১০:৫২ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০ বুধবার
২০১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ম্যাক্রো এবং মাইক্রো উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ব অর্থনীতির বিচারে মিশ্র চিত্র দেখা যায়। বৈশ্বিকভাবে, বিগত বছরে কোন বড় ধরনের বিপর্যয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়নি, কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানী-রপ্তানীতে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৯ সালে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ প্রবৃদ্ধিকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি হিসাবে বিবেচনা করেছেন।
রপ্তানীর ক্ষেত্রে নতুন বাজার তৈরী এবং বেশী সংখ্যক বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করা ও বিভিন্ন ধরনের মেগা আধুনিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করার জন্য এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালীন বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ ৫.৩৬ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিন এশীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টিমারের মতে উচ্চ উপাত্তের পুনরাবৃত্তি দেখে প্রতীয়মান হয় যে ”বাংলাদেশ দক্ষিন এশীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো করছে বিশেষত : ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানের চেয়ে। আমরা শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানী উভয় ক্ষেত্রেই এটা দেখি।” বাংলাদেশের রপ্তানী আয় ২০১৯ সালে ছিল ৩৯.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৮ সালে ছিল ৩৯.২৫ বিলিয়ন। আমদানী ব্যায় ২০১৯ সালে ছিল ৫৯.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৮ সালে ছিল ৬০.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ক্যালেন্ডার বছর অনুসারে)।
র্যামিটেন্স আয় ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ ৯.৮ শতাংশ বেড়ে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন এবং রেমিটেড টাকার উপর ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে।
World Economic Forum (WEF) এর প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ ১৯৭৫ সাল থেকে United Nations কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ছিল, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির
গতি-প্রকৃতি অনুসারে ২০২৪ সাল নাগাদ এ দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্রেজুয়েশনে উন্নীত হওয়ার নিদর্শন হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য দেশের পার ক্যাপিটা গ্রস ন্যাশনাল ইনকাম, হিউম্যান এসেটস এবং অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা অর্জন।
WEF Global Competitiveness Report ২০১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৫। IT ইন্ডাষ্ট্রির সফলতা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এবং চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের টেকনোলজি প্রডাক্ট রপ্তানী করে-যা ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। এছাড়াও দেশে ৬০০,০০০ IT ফ্রিলেন্সার আছে, WEF প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
যেহেতু নানাবিধ বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, যেমন পদ্মা সেতু, এমআরটি সিস্টেম, এলএনজি টার্মিনাল এবং বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, গভীর সমূদ্র বন্দর ইত্যাদি। আমাদের সীমিত সম্পদের কারনে এসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সরকারকে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ার কারনে বেসরকারী খাতে ঋণের সরবরাহ কমে গেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারী খাতে ঋণ সরবরাহের প্রবৃদ্ধি কমে ১১.৩২ শতাংশ হয়েছে ১৬.৫ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে। ব্যাংকের মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারনে এটা হচ্ছে। বিগত বছর জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী মোট অনাদায়ী ঋণের ১১.৬৯ শতাংশ হচ্ছে মন্দ ঋণ এবং এর মধ্যে অনেকগুলো আবার ইচ্ছাকৃত মন্দ ঋণ।
World Economic League Table (WELT) 2020, London-based Centre for Economics and Business Research (CEBR)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী জনশক্তি এবং বর্ধমান পার ক্যাপিটার উপর ভিত্তি করে ২০২০ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ফোরণ ঘটবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৩০ তম বৃহৎ অর্থনীতি হবে এবং মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৯ এবং ২০৩৪ সালে যথাক্রমে ২৬তম ও ২৫ তম অবস্থানে যাবে।
যাহোক, বিশেষজ্ঞদের মতে পরবর্তী দশকে দু’টো গুরুত্বপূণৃ বিষয় বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারাকে প্রভাবিত করবে--এক : ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরন এবং দুই : টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন। মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে অনেক নতুন চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে, বিশেষত রপ্তানী পণ্যের মূল গন্তব্যের দেশগুলোর ট্রেড প্রেফারেন্স হারাতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে অনেক কঠোর ও দুরুহ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
আরকে//