ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

খুতবায় করোনা নিয়ে আলোচনার আহবান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৩ পিএম, ১২ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার

বর্তমান বিশ্ব করোনা ভাইরাসে টালমাটাল। করোনা ভাইরাস আঘাত হেনেছে বাংলাদেশেও। এ ভাইরাসটি সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ভাইরাসটি থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়ে শুক্রবার জুমার খুতবায় আলোচনা করার জন্য ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহবান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

আজ বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীন, ইতালি, ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে অনেকে গুজব, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। জনমনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। এ পটভূমিতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ সমগ্র মানবজাতিকে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা, নিরাপদ ও সতর্ক করার লক্ষ্যে ইসলামের আলোকে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো আগামীকাল শুক্রবার জুমার খুতবায় দেশের সকল মসজিদে আলোচনা করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত ব্যক্তির মসজিদে আগমন ও জনসমাগম পরিহার করার বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার খুতবায় তুলে ধরা এবং করোনা ভাইরাস থেকে হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর দয়া, ক্ষমা ও করুণা প্রার্থনা করে বিশেষ দোয়া করার অনুরোধ করা হলো।

গত রোববার বিদেশফেরত তিন জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। 

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তাদের যেকোনো দিন ছেড়ে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বের অন্তত ১১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৬০১ জনের। আক্রান্ত হয়েছে আরও ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। যা নিয়ে বর্তমানে ১ লাখ প্রায় ২৩ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত।’

এর মধ্যে মূলভূখন্ড চীনে নতুন করে ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে সেখানে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১৬৯ জন। আর নতুন করে ৩৬ জন আক্রান্ত হওয়ায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৭৯৩ জনে। সুস্থ বাড়ি ফিরেছেন এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি নাগরিক। 

অপরদিকে চীনের বাহিরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগের দিন ১৬৮ জন, তার আগের দিন ৯৭ জন, তারও আগের দিন ১৩৩ জন মারা যায় প্রাণঘাতী ভাইরাসে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এতে করে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে।

দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩১৪। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজারে পৌঁছেছে। যা চীনের পরেই সর্বোচ্চ।

ফলে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। খাবার দোকান ও ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থা সবচেয়ে করুণ। সেখানেই আক্রান্ত ও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে পানশালা, রেস্তোরাঁ, সেলুন ও এই মুহূর্তে জরুরি নয় এমন কোম্পানিগুলোর সব বিভাগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী কন্তে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এর আগে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধূলা, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব, সিনেমা, মসজিদ এবং অন্যান্য ভেন্যু আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩শ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত সংখ্যা ৯ হাজার। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার মানুষ করোনায় ভুগছেন। মৃতের সংখ্যা ৬৬ জন। 

আক্রান্তের দিক থেকে কোরিয়ার পরেই স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। স্পেনে ২ হাজার ১৪০ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ জন। প্রান্সে আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে রয়েছেন ১৭৮৪ জন। 

আর জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩শ ব্যক্তির দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যেখানে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। 

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৯৮৭, মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৪৭৬ এবং মারা গেছে ৩ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৪৫৬ মৃত্যু ৮। ইরাকে আক্রান্ত ৬০, মৃত্যু ৬। ভারতে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।

সবমিলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৪টি ভাইরাসটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। যার সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশ। যেখানে এখন পর্যন্ত ৩ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে দুই জনের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে। আর দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ আছেন অন্তত ২১০ জন। 

এমন পরিস্থিতিতে ভাইরাসটিকে মহামারি আকার ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।  বুধবার রাতে সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস জানান, গত দুই সপ্তাহে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ওই সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। 

এমএস/এসি