ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনার হানায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯৪৮

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০ এএম, ১৩ মার্চ ২০২০ শুক্রবার

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও ভয়াবহ অবস্থা ইউরোপ, আমেরিক ও মধ্যপ্রাচ্যে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সকল প্রতিষেধক যেন অকেজো হয়ে গেছে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃত বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার পরও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে করোনা সংক্রমণ। যার সবেচেয় বড় ভুক্তভোগী ইরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি। 

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বের অন্তত ১১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৯৪৮ জনের। আক্রান্ত হয়েছে আরও ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। যা নিয়ে বর্তমানে ১ লাখ প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত।’

ভাইরাসটিতে মূলভূখন্ড চীনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১৭৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৮১৩ জনে। সুস্থ বাড়ি ফিরেছেন এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার নাগরিক। 

অপরদিকে চীনের বাহিরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগের দিন ১৯৬ জন, তার আগের দিন ১৬৮ জন মারা যায় প্রাণঘাতী ভাইরাসে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এতে করে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬ জনে।

দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭শ জন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার  ছাড়িয়েছে। যা চীনের পরেই সর্বোচ্চ। 

ফলে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। খাবার দোকান ও ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালির অবস্থা সবচেয়ে করুণ। সেখানেই আক্রান্ত ও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে পানশালা, রেস্তোরাঁ, সেলুন ও এই মুহূর্তে জরুরি নয় এমন কোম্পানিগুলোর সব বিভাগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী কন্তে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এর আগে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধূলা, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব, সিনেমা, মসজিদ এবং অন্যান্য ভেন্যু আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও তা অনির্দিষ্টকালে পড়েছে। 

থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪২৯ জন মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার মানুষ করোনায় ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৭ জন।

এদিকে প্রথম বারের মত ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ৭৬ বছর বয়সী করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সারাদেশে কোয়ারেন্টাইনে আছেন অন্তত ৯০০ জন। নতুন প্রবাসীদের দেশে না ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। 

আক্রান্তের দিক থেকে কোরিয়ার পরেই স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। স্পেনে প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তির আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৮৪ জন। ফ্রান্সে আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপতালে রয়েছেন ২ হাজার ২৮১ জন। 

আর জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬৯ ব্যক্তির দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যেখানে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। 

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে হাজার ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৮১৫ এবং মারা গেছেন ৬ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৫৯০, মৃত্যু ৮। জাপানে ৬২০ জনের আক্রান্তদের মধ্যে মারা প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। ভারতে এখন পর্যন্ত ৭৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। 

সবমিলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৪টি ভাইরাসটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। যার সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশ। যেখানে এখন পর্যন্ত ৩ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে দুই জনের অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে ভাইরাসটিকে মহামারি আকার ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।  গত বুধবার রাতে সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস জানান, গত দুই সপ্তাহে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ওই সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। 

এআই/