ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

জেনে শুনে কেন বিষ করছি পান?

সোহাগ আশরাফ

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ১৪ মার্চ ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২০ শনিবার

পাশ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। আজ থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসও বন্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। মক্কায় ওমরা পালনে কড়াকড়ি। ইরান, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় সমাবেশ, নামাজ ও বিশেষ প্রার্থনায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এক কথায় যদি বলি- বিশ্ব আজ অচল। সবাই সেলফ কোয়ারেন্টাইনে। অথচ আমাদের দেশের উদারতা দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে আমরা -জেনে শুনে বিষ করছি পান!

এ বছর আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপানে দেশব্যাপী বিশেষ আয়োজন করেছিলাম। সব কিছু ঠিকঠাক কিন্তু দেশের মানুষের কথা ভেবে সরকার প্রধান জনগণের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব স্থগিত ঘোষণা করে তিনি সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হয়ে পথ চলার আহ্বান দিয়েছেন।

করোনা আতঙ্কে বাজারে যে অসাধু ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছিল তাদের প্রতিহত করতে চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাস্ক নিয়ে কি কাণ্ডটাই না হয়েছে দেশে। প্রতিদিন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর আপডেট দিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলন করে জানান দিচ্ছেন তাদের বর্তমান অবস্থা।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি লিফলেট বিতরণ করছে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য। সব মানুষ এখন সতর্ক। কর্মস্থলেও কেউ কেউ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু তবুও আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।

সমস্যা এখন একটাই; তা হচ্ছে প্রবাসীরা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদেরই ভাই-বোন, প্রবাসীরা। তারা বছরের পর বছর মা-বাবা, পরিবার ছেড়ে দূরে থাকছেন। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাচ্ছেন। তাদের কাছে বাংলাদেশ ঋণি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি যেমনটা হয়েছে তাতে করে প্রবাসী বন্ধুরা যেভাবে দেশমুখি হয়ে উঠছেন তাতে আতঙ্কিত না হয়ে পারছি না।

সরকারও মনে হচ্ছে এ বিষয়ে উদাসিন। শুরু থেকেই আমার মধ্যে এই বিষয়টি কাজ করেছে। আমি একটা কথাই বলেছি- প্রবাসী সহ বিদেশীদের দেশে প্রবেশে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ইউরোপ, এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে এখন বলছি বন্ধ করা হোক সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশী ভাই বোনেরা যে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করুন। সেখানেই নিজের সুরক্ষা গড়ে তুলুন। কারণ উন্নত দেশে আমাদের দেশের তুলনায় চিকিৎসা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভালো।

একবার ভেবে দেখুন- আপনার কারণে দেশে যদি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তবে কোথায় যাব আমরা? আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাদের জানা আছে। দেশে মহামারি আকার ধারণ করলে নিজেদের সুরক্ষা করার ক্ষমতা থাকবে বলে মনে হয় না।

সরকারের কাছে দাবি- পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন- প্রবাসীরা যার যার দেশে অবস্থান করুন। আমি বলছি- দেশে এমুহূর্তে কারও প্রবেশ করার দরকার নেই। খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছাড়া বা কোন বাংলাদেশী অন্য দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে না পড়লে আসার দরকার নেই। বন্ধ করে দেওয়া হোক সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশ্ব যখন শান্ত হবে, পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণে আসবে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

করোনা নিয়ে নিজের বক্তব্য পূর্বে প্রকাশ করতে গিয়েও থেমে ছিলাম। কিন্তু আজ সকালে একটি সংবাদ দেখে আর না লিখে পারলাম না। আজ শনিবার সকালে ইতালি থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন শতাধিক লোক। যদিও তাদের সরাসরি নেওয়া হয়েছে আশকোনার হজ ক্যাম্পে। এর আগে যারা দেশে ফিরেছেন তাদেরও নিজ নিজ বাড়িতে আলাদা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমার দাবি এখন একটাই- দেশে না আসা। এটাই সুরক্ষার উত্তম পথ বলে মনে করি।

এখনই দরকার জরুরী অবস্থার! কিছু মানুষের মৃত্যু হবার পর জরুরী অবস্থা জারি কাম্য নয়।
এসএ/