ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস : নিয়ন্ত্রণে চীন, বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ৫৩৭৩ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২২ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২০ শনিবার

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এসেছে উৎপত্তিস্থল চীনে। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ইউরোপের দেশুগুলোতে। 

পৃথিবীর ১১৫টি দেশে ছড়ানো করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এতে নেই কোনো চীনা নাগরিক। শুধু যে প্রাণহানি থেকে মুক্তি মিলেছে তা নয়, উহানসহ দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে এই সময়ে নতুন করে কোনও ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উল্টো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন নতুন আরও প্রায় ৩ হাজার নাগরিক। যার সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। 

ফলে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে মৃত্যুর মিছিল ভারি হলেও উন্নতির দিকে এশিয়ার সবচেয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেশটি। 

এদিকে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে ইতালি, ইরানসহ অন্যান্য দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এতে সকল প্রতিষেধক যেন অকেজো হয়ে গেছে। কানাডা ও ইসরাইল ভেকসিন আবিষ্কারের বার্তা দিলেও তা হাতে পাওয়া যাবে বছরের শেষ দিকে। ততদিনে চলমান অবস্থা অব্যহত থাকলে গোটা বিশ্বই মৃত্যুকূপে পরিণত হবে। 

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার পর মহামারি ঘোষণার করেছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের নতুন করে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যার সবেচেয় বড় ভুক্তভোগী ইরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি। 

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ শনিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বের অন্তত ১১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ৪২৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৩ জনের। বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ লাখ প্রায় ৪১ হাজার মানুষ। 

ভাইরাসটিতে মূলভূখন্ড চীনে অপরিবর্তীত রয়েছে মৃতের সংখ্যা। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১৭৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮১৩। 

অপরদিকে চীনের বাহিরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালিতে।  গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আরও ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়। এরও আগের দিন ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৬ জনের প্রাণহানি ঘটল। যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে সর্বোচ্চ। 

এদিকে মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দেশটিতে দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের মিছিল। যেখান থেকে অনেকেই লাশ হয়ে ফিরছেন। 

গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর অবরুদ্ধটি দেশটিতে ছয় কোটি মানুষকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। 

ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, স্পেনসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেখানে লন্ডনে ২ বাংলাদেশির মৃত্যুর পাশাপাশি স্পেনে ৮ বাংলাদেশি মরণ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। 

থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারান ৮৫ জন। আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের দেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ করোনায় ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৭ জন।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিল্লির এক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই নারীর বয়স ৬৬ বছর। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এশিয়ার দেশটিতে এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হল। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

আর প্রবাসী ৩ বাংলাদেশির শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুইজন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। একজন বাড়ি ফিরেছেন। আরেকজনের পরিবারের সদস্যরা কোয়ারেন্টাইনে থাকায় আপাতত তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। অপরজনের অবস্থাও উন্নতির দিকে। আরেকটি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলে তাকেও করোনা মুক্ত ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

আর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২১ জেলার ১ হাজার ১৭৪ জনকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। নতুন প্রবাসীদের দেশে না ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। 

আক্রান্তের দিক থেকে কোরিয়ার পরেই স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। স্পেনে ৪ হাজারের বেশি নাগরিক আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা শতক ছাড়িয়ে ১২০ জনে দাঁড়িয়েছে।  ফ্রান্সে আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন সাড়ে ৩ হাজার মানুষ।  

আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে জার্মানিতেও। এখন পর্যন্ত ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যেখানে মৃত্যু হয়েছে ৮। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অপরিবর্তীত রয়েছে। যেখানে ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। 

এছাড়া, ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রেম্পের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৮ জনে পৌঁছেছে। যেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার (১৩ মার্চ) স্থানীয় সময়ে দুপুরে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। 

এই ঘোষণার পাশাপাশি প্রাণঘাতী ভাইরাসটি মোকাবেলায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন,  এ অর্থ দেশের মানুষ ও প্রদেশের জন্য ব্যয় করা হবে। আমরা সবাই মিলে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’

এছাড়া, সুইজারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে এবং মারা গেছেন ৬ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৭৯৮ , মৃত্যু ১০। জাপানে ৬২০ জনের আক্রান্তদের মধ্যে মারা প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। সবমিলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৫টি দেশে ভাইরাসটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। 

দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ওই সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে। 

এআই/