ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনা সংকট: প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৮:৪২ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০ সোমবার

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. মীজানুর রহমান, ড. ফাহমিদা খাতুন 

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. মীজানুর রহমান, ড. ফাহমিদা খাতুন 

বিশ্বজুড়ে এখন অস্থিরতার নাম করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতি এ ভাইরাস ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব নেতারা। কোন কিছুই যেন কাজে আসছে না। বিশ্বের ১৩২টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যত এক দেশ থেকে অন্যদেশ বিচ্ছিন্ন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভাইরাস আরও জটিলভাবে আঘাত করলে বিশ্বের অর্থনীতিতে বছরে উৎপাদন কমবে ৩৪ হাজার ৬৯৭ কোটি ডলার।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। রোববার পর্যন্ত ৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। যাদের তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য সারাদেশে আজ পর্যন্ত ২ হাজার ৩১৪ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে। আমদানি-রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের আমদানি সঙ্কটে দেশের ব্যবসায়ীরা বড় অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। অর্থনীতির দুর্দশার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ক্ষতিগ্রস্থ ২০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাড। 

বিশিষ্টজনেরা বলছেন করোনা মোকাবেলা করতে হলে এখনই প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরে এ ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে মহামারি ঘোষণা করেছে। করোনার কারণে অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়লেও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘শুধু এ সংকটই নয়। যে কোন সংকট নিরসনেই ঐক্যের প্রয়োজন। তবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তো এটা কল্পনাই করা যায় না। মত প্রকাশে স্বাধীনতা থাকবে। ভিন্ন মত থাকবে। তাই বলে সংকটের সময় ঐক্যে থাকবে না, এটা হয় না।’ 

সংকট নিরসনে বাংলাদেশ কি করতে পারে এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে সংকট এখন চলছে, এটি থাকবে না। কিন্তু যে ক্ষতির সম্মুখিন আমরা হচ্ছি তা মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। দেখুন আমরা দুই দিন আগেও কল্পনা করতে পারিনি এমনটি হবে। সে সময় আমরা সকল দেশের সঙ্গে আরও যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমরা জোর করেই যোগাযোগ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এটা তো আমাদের কল্পনা ছিল না। আর এখন গ্লোবাল ভিলেজের যুগ। এ সময় বিশ্বের এক প্রান্তে কোন সমস্যা দেখা দিলে তো অন্য প্রান্তে এর প্রভাব পড়বেই।’ 

সার্কের সদস্য দেশগুলোর ভিডিও কনফারেন্সের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সার্কের দেশগুলো এক যোগে কাজ করার চেষ্টা করছে এটা একটা ভালো উদ্দ্যোগ। এ জন্য নেতৃবন্দকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়। বিশ্বের সব দেশকে একযোগে কাজ করে এ সংকট মোকাবেলা করতে হবে।’

বাংলাদেশ এ সংকট মোকাবেলার জন্য কি করতে পারে? বললেন, ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলসহ বিশেষজ্ঞরা মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমাদের এখন করণীয় কী?’

অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে তা মোকাবেলার শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘ক্ষতি তো হবেই। এটা মোকাবেলার জন্য কি করতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কাজ করতে হবে পরিকল্পনা মাফিক। এখনই সময় পরিকল্পনা করার।’

তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি বুঝতে আরও সময় লাগবে বলে মত দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের লেনদেন কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের পণ্যে কতটা প্রভাব ফেলবে তা বুঝতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। করোনাভাইরাস কতটা ভয়াবহ রূপ নেয়, তার উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাবের মাত্রা কতটা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে এখনই কাঁচামালের বিকল্প খুঁজে আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ অন্যান্য দেশও বিকল্প উৎসগুলোতে যেতে শুরু করছে। একইসঙ্গে সরকারকে রফতানি বাজারও যাচাই করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমদানিকারক দেশগুলোয় কী ধরণের চাহিদা হচ্ছে, আমাদের কাছে রফতানির জন্য কী আছে সেটা দেখতে হবে।’

উল্লেখ্য, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ রোববার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ।  বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষ। 

এমএস/এসি