ইতালিতে করোনায় একদিনে ৩৬৮ জনের প্রাণহানি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৪ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০ সোমবার
চীনের বাহিরে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেশি- সংগৃহীত ছবি
বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত ইউরোপিয়ান দেশগুলো। এর মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি চলছে। দেশটিতে প্রতিনিয়ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলছে।
গতকাল শনিবার ১৭৫ জনের মৃত্যুর পর গত ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা দ্বিগুন হারে বেড়েছে। গতকাল রোববার এক দিনে দেশটিতে ৩৬৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০৯ জন প্রাণ হারালেন। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে এটাই মৃতের সর্বোচ্চ সংখ্যা। অবরুদ্ধ দেশটি যেন মৃত্যুনগরীতে পরিণত হয়েছে।
ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ৬ শত জনের বেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সারি দীর্ঘ হয়ে ২৪ হাজার ৭৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। খাবারের দোকান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পরও থামছে না আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দেশীয় কিছু সম্ভাব্য প্রতিষেধক দেশব্যাপী ছড়ালেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সব ধরণের মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে প্রাণহানির ঘটনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ সোমবার আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তের নির্দেশে ছয় কোটিরও বেশি মানুষকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ বাংলাদেশিও রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যগুলো জানিয়েছে।
পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী কন্তে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, ‘এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।’
এর আগে দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব, সিনেমা, মসজিদ এবং অন্যান্য ভেন্যু আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও তা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে।
দেশটিতে জারি করা জরুরি অবস্থার মধ্যে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। প্রাণঘাতি ভাইরাসটির প্রকোপে থমকে আছে পুরো ইতালি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। কোনো পর্যটক দেশটিতে প্রবেশ করতে পারছেন না। সরকারের কঠোর নির্দেশনা, অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন ঘর থেকে বাইরে বের না হয়।
দ্রুত বিস্তার করায় রাজধানী রোমসহ অন্যান্য জনবহুল শহরগুলো এখন জনমানব শূন্য। দেশটির সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফেরারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোকসান গুনতে হবে ইতালিকে।
ইউরোপের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ইউরোপের দেশগুলো থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ অঞ্চলের প্রতিনিধিরা। এমন অবস্থায় ঐ সকল দেশ থেকে কেউ নিজ দেশে আসার চেষ্টা করলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনা ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে। বুধবার (১১ মার্চ) রাতে সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস জানান, গত দুই সপ্তাহে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার হতে থাকায় গত ৩০ জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। ঐ সময়ে সংস্থাটির প্রধান জানান, এর মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
আজ সকাল পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রাণ গেছে সাড়ে ৬ হাজার জনের। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাড়ে ৭৬ হাজারেও বেশি মানুষ।
ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। স্পেন থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এআই/এমএস/