করোনাশঙ্কা: ১৮ জেলায় পর্যবেক্ষণে ১৫৬৫ জন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:২২ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার
করোনাশঙ্কা: ১৮ জেলায় পর্যবেক্ষণে ১৫৬৫ জন
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। মহামারি এ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী মিলেছে বাংলাদেশেও। এখন পর্যন্ত ১০ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে ভাইরাসটি। করোনা সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সতর্কতায় সারাদেশে দেড় সহস্রাধিক মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইন বা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে, বাড়ছে আতঙ্ক।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা শঙ্কায় দেশের ১৮ জেলায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ১৫৬৫ জন। পর্যবেক্ষণে থাকা এসব ব্যক্তিদের বেশিরভাগই সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তিদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক তাদের ওপর নজর রাখছেন। তবে বেশ কিছু লোককে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
দেশের যেসব জেলায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে -
মাদারীপুর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাদারীপুরে ১২৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ও একজনকে আইসোলেশনে রাখা রয়েছে। গত কয়েকদিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর ১৩৮ জনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল: এ জেলায় ভারতীয় নাগরিকসহ ২৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত রোববার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২ জন। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। এদেরকে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেই জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস।
নেত্রকোনা: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে নেত্রকোনায় বিদেশফেরত ৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন ইতালিফেরত ও একজন চীনফেরত। তাদের শরীরে কোনও করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নেই। এখন পর্যন্ত তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনার সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম।
নওগাঁ: জেলার ১০ উপজেলায় বিদেশফেরত মোট ৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আখতারুজ্জামান আলাল।
রাজবাড়ী: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীতে নতুন করে ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে রাজবাড়ীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ৩১ জন প্রবাসী। এরা ইতালি, চীন, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ, কাতার, সাউথ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা: সর্দি-কাশি থাকায় সাতক্ষীরায় ১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেল থেকে তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় ১৩ জনকে ইতোমধ্যে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এসব ব্যক্তিদের আমরা বিশেষ নজরদারির মধ্যে রেখেছি।
সিরাজগঞ্জ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সিরাজগঞ্জে ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বেলকুচি উপজেলায় পাঁচজন, রায়গঞ্জে তিনজন, কাজীপুরে একজন ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৯ জন রয়েছেন।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে বিদেশফেরত আরও ৮ জনসহ মোট ১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে দুজন, সৌদি আরব থেকে একজন, ইতালি থেকে একজন, নেদারল্যান্ডস থেকে চারজন সম্প্রতি দেশে ফেরেন। পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১০ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ: গত ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হয়েছে বিদেশ ফেরত আরও ৯৩ জন ব্যক্তি। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত জেলায় মোট ৩২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জন প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শরীয়তপুর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শরীয়তপুরে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত মোট ২১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিন পার হওয়ার পর ৩৩ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস এম আব্দুল্লাহ্ আল মুরাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঝিনাইদহ: করোনা প্রতিরোধে ঝিনাইদহে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) নতুন করে বিদেশ ফেরতসহ ২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশ ফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারত ফেরত ৪৬ জনসহ মোট ২৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো। তবে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি।
চাঁদপুর: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চাঁদপুরে বিদেশফেরত ১৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াতউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৌলভীবাজার: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মৌলভীবাজারে ১১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখা উপজেলায় ইতালি, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যফেরতদের সঙ্গে তাদের কয়েকজন নিকট আত্মীয়ও রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে এখনও করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে করোনা ভাইরাস সন্দেহে ১৩৮ জনকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেলার অষ্টগ্রামে ১২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকিরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে ভৈরবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা ৬৯ জনকে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে ইতালি, স্পেন ও ওমান থেকে আসা ১০ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত শনিবার (১৪ মার্চ) ও রোববার (১৫ মার্চ) বিদেশ ফেরত এ সকল প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন।
বরগুনা: বরগুনায় সদ্য বিদেশফেরত আটজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে (১৭ মার্চ) বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ূন শাহিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক চীনা নাগরিকসহ বিদেশফেরত ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট: করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে সিলেটে এক নারীসহ দুজনকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ওই নারী প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। পরে সোমবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনএস/