ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে বনে আগুন, পুড়ে গেছে অনেক গাছ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৪:৪৬ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২০ বুধবার

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বেসরকারি সংস্থা হিড বাংলাদেশের কার্যালয়ের পিছনের বনাঞ্চলে এবং লাউয়াছড়ার শ্রীমঙ্গল জাগছড়া অংশে চা বাগানের ৩৩ নং সেকশনে আগুন লেগে বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে।

হিড বাংলাদেশের স্থানীয় কর্মকর্তা তপন সাহা জানান, গতকার মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আগুন লাগে। প্রথমে তারা চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দিলে তারা দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে সন্ধা সাড়ে ৬ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ আগুনে বনের বেশ কিছু উদ্ভিদ ও গাছপালার নিচের অংশ পুড়ে গেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসেস ও সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর কাদির বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে হিড বাংলাদেশের কার্যালয়ের পিছনের বনে আগুন লাগে। ছোট আকারের আগুন ক্রমশ চার দিকে ছড়ালে বিকালের দিকে বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা। তিনি বলেন, আগুন অনেক আগে থেকে জ্বললেও তাদের কাছে খবর যায় বিকাল ৪টা ১৭ মিনিটে। খবর পাওয়ার পর পরই তারা ঘটনাস্থলে রওয়ানা হলেও বনের ভিতরে গাড়ি প্রবেশ করতে না পারার কারণে আগুন নেভাতে তারা পাতাসহ গাছের ডাল কেটে বারি দিয়ে দিয়ে আগুন নেভান।

তিনি জানান, বিচ্ছিন্নভাবে ৪/৫ জায়গায় আগুন ছিল। এতে ধারাণা করছেন কেউ হয়ত আগুন লাগিয়েছে। আর আগুন যখন জ্বলে জ্বলে হিডের স্থাপনার কাছে চলে আসে তখন তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তিনি বলেন, পানি নিয়ে না যেতে পাড়ায় আগুন নেভাতে কষ্ট হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বনে আগুনের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে আগুন লাগলেও তারা জেনেছেন অনেক পরে। তার পরও ফায়ার সার্ভিসেস সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সাথে পুলিশের একটি দলও সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোতে সহায়তা করে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকও বনে আগুন লাগার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগুন আপাদত নিভে গেলেও আবারও যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সে দিকে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে।

এদিকে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এ আগুন নিয়ে তারা আতঙ্কে ছিলেন, যেহেতু বনের পর পরই হিডের অংশ। তাই তারা সতর্কাবস্থায় ছিলেন। এতে হিডের ভিতরে ছোট ছোট গাছের ক্ষতি হলেও লাউয়াছড়া বনের কোন ক্ষতি হয়নি।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা জানান, হিডের অধিনে ১৮৯ একর পাহড়ি জমি রয়েছে। যার মধ্যে বন থেকে লিজ নেয়া ৭০ একর। আর এই মুহূর্তে হিডের অনেক জমি চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। হিডের আবাসিকের পেছনে ঘন জঙ্গলাকৃত এই জমির কয়েকটি স্থানে আগুন, এটি রহস্যজনক। একটি স্থানে হলে ধারণা করা যেত বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে এর উৎপত্তি। কিন্তু বিচ্ছিন্ন স্থানে এ আগুন লাগায় এটি নতুন করে দখলের পায়তারা হতে পারে বলে তারা অনুমান করছেন।

অপর দিকে লাউয়াছড়া বনের শ্রীমঙ্গল জাগছড়া অংশে জাগছড়া চা বাগানের ৩৩ নং সেকশনে চা বাগানের পরিত্যাক্ত জায়গায় আগুন লেগে বেশ কিছু জায়গা পুড়ে যায়। ওই জায়গা থেকে লাউয়াছড়া বনের দূরত্ব প্রায় দুইশত গজ বলে জানান শ্রীমঙ্গল ফায়ার সাভিসেস ও সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক রাজন। তিনি জানান, তারা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পৌঁছার পর ওই বাগানের ব্যবস্থাপক আগুন নিভে গেছে বলে জানালে তারা ফিরে আসেন।

শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোনায়েম জানান, ওই দিকেও আগুনের খবর পেয়ে বন কর্মীরা দ্রুত জাগছড়া এলাকায় অবস্থান নেয়। আগুন যেন লাউয়াছড়া বনে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে তারা সতর্ক ছিলেন। তবে চা শ্রমিকরা নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে বলে তিনি জানান।

একে//