সুনামগঞ্জে করোনা ঝুঁকিতে ওরস ও পণতীর্থে গঙ্গাস্নানযাত্রা বন্ধ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:১৯ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২০ বুধবার
করোনা ভাইরাসের ঝঁকি মোকাবেলায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক ওরস মোবারক ও জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী পণতীর্থে বারুণীমেলায় স্নানযাত্রা উৎসব বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়ের সাহিদাবাদে হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) এর আস্থানায় চলতি বছর ২১ হতে ২৩ মার্চ তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওরস মোবারক ও রাজারগাঁও শ্রী অদ্বৈত আচার্যের জন্মধাম জাদুকাঁটা নদীতে একই সময়ে গঙ্গাস্নানযাত্রা মহোৎসব এবং বারুণীমেলা হওয়ার কথা ছিল।
প্রাচীন রীতি অনুযায়ী প্রায় ৭’শ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা দেশে বিদেশের ৪ হতে ৫ লাখ লোকজনের অংশগ্রহণে একই সময়ে তিন দিনব্যাপী ওরস ও গঙ্গা স্নানযাত্রা মহোৎসব চলে আসলেও এই প্রথম বারের মত করোনা ভাইরাস ঝুঁকি মোকাবেলায় দুটি উৎসব জেলা প্রশাসন সর্বসম্মতিক্রমে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সোমবার এ সংক্রান্ত এক জরুরী সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
জরুরী সভায় দেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় চলতি বছর (২১-২৩ মার্চ) হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্থানায় বার্ষিক ওরস ও শ্রী অদ্বৈত আচার্য’র জন্মধাম জাদুকাঁটা নদীর পণতীর্থে গঙ্গাস্নানযাত্রা মহোৎসক ও বারুণী মেলা বন্ধ, জেলা জুড়ে সকল প্রকার ধর্মীয় গণজমায়েত বন্ধ, ওরস স্থল, অদ্বৈত আচার্য’র জন্মধাম রাজারগাঁও, জাদুকাটানদীর চর, গড়কাটি ইসকন মন্দির প্রাঙ্গনে গণজমায়েত বন্ধে খাবারের রেষ্টুরেন্ট, খেলনা ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকানপাঠ, গান বাজনার জন্য কাফেলাঘর ও যে কোন ধরণের অস্থায়ী স্থাপনা তৈরী বন্ধ রাখা, যানবাহন পার্কি’র নামে কোন ষ্ট্যান্ড তৈরী না করা, ওরস ও স্নানযাত্রা মহোৎসবে বিদেশি অতিথি আগমন নিরুৎসাহিত করণ, হযরত শাহ আরেফিন (র:) বাৎসরিক ওরস ও পণতীর্থ গঙ্গাস্নানযাত্রা মহোৎসব বারুণী মেলা বন্ধের বিষয়ে বিষয়ে দেশের সকল জেলা প্রশাসককে পত্র প্রেরণসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের পরিচালনায় সভায় ২৮-বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’ সুনামগঞ্জের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাকসুদুল আলম, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম, সিভিল সার্জন ডা: মো. শামস উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমীর বিশ্বাস, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক পঙ্কজ কান্তি দে, ইমাম মোয়াজ্জিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আ্যাডভোকেট বিমান কান্তি রায়, সাধারণ সম্পাদক বিমল বনিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সুনামগঞ্জ’র সাধারণ সম্পাদক আ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, তাহিরপুর রাজারগাঁও অদ্বৈত আচার্য’র জন্ম সংস্কার, সংরক্ষণ পণতীর্থে গঙ্গা স্নানযাত্রা মহোৎসব উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি স্মৃতি রত্ন দাস, সাধারণ সম্পাদক অদ্বৈত রায়, হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) ’র আস্থানায় উরস উদযাপন কমিটির লোকজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ওরস ও পণতীর্থে গঙ্গা স্নানযাত্রা মহোৎসবসহ তিন দিনব্যাপী বারুণী মেলা বন্ধে সিদ্ধান্ত গৃহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি মানুষজনের গণজমায়েত রোধে ও মূলত করোনা ভাইরাস ঝুঁকি মোকাবেলায় দুই ধর্মের প্রতিনিধিরাই মুলত ওই দুটি উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাই চলতি বছর ২১ হতে ২৩ মার্চ লাউড়েরগড় সীমান্তে হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)’র বার্ষিক ওরস ও পণতীর্থে বারুণীমেলা এবং গঙ্গা স্নানযাত্রা উৎসব হচ্ছে না।
কেআই/আরকে