অগ্নিঝরা ১৪ মার্চ: চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৩৬ পিএম, ২০ মার্চ ২০২০ শুক্রবার
আজ ১৪ তারিখ। অগ্নিঝরা মার্চের ১৪তম দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনটি ছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বের শেষ দিন।
এই দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দেয়ার বিষয়ে যে চারটি শর্ত দিয়েছিলেন তার স্বীকৃতি আদায়ে ঢাকার পথে প্রান্তরে অসংখ্য সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
তবে দিন যতই গড়াচ্ছিল, স্বাধীনতাকামী বাঙালির ঐক্য ততই সুদৃঢ় হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে তখনকার অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড় ও দৃঢ়ভাবে একাত্মতা ঘোষণা করে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন। সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনে দেশ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক- সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রস্তুতি নিতে থাকেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের।
এ দিনে ন্যাপ নেতা আবদুল ওয়ালী খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠক হয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এ লড়াই জনগণের দ্বারা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বসবাসের জন্য লড়াই।
এদিন রাতে শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে সবাইকে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করা যাবে না। আমরা অজেয়, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত।
এদিকে ১৪ মার্চ করাচিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব ও পশ্চিমের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেন, যা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। সাবেক গভর্নর আযম খান, ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান, জমিয়াতুল উলেমা-ই-ইসলাম নেতা মুফতি মাহমুদ, কাউন্সিল লীগ নেতা মিয়া মমতাজ দৌলতানা, সরদার শওকত হায়াত খান, মওলানা শাহ আহমদ নূরানী, কনভেনশন লীগের জামাল মোহাম্মদ কোরেজা, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল গফুর, সরদার মওলা বক্স সুমরো পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা শেখ মুজিবকে সমর্থন করে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
তবে মুসলিম লীগের আবদুল কাইয়ূম খান আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন।
শেখ মুজিব সামরিক নির্দেশের জবাবে জীবনের বিনিময়ে ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীনভাবে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরকার পরিচালনার জন্য তাজউদ্দীন আহমদ ৩৫ দফাভিত্তিক নির্দেশনামা জারি করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সম্পদ পাচার রোধের অংশ হিসেবে ঢাকার কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে। ঢাকার পত্রিকাগুলো ‘আর সময় নেই’/ ‘Time is Running Out’ শিরোনামে যৌথ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।