ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কঠিন সতর্কতায় জার্মানি

বকুল ভূঁইয়া, জার্মানি থেকে

প্রকাশিত : ০৫:১৮ পিএম, ২০ মার্চ ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৮:৩১ পিএম, ২০ মার্চ ২০২০ শুক্রবার

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বন্ধ করা জার্মানির একটি পার্ক- দ্যা লোকাল

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বন্ধ করা জার্মানির একটি পার্ক- দ্যা লোকাল

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত জনজীবন। চীনের পরে বর্তমানে ইউরোপে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের কারনে ভয়ঙ্কর দৃশ্যপট দেখছে ইউরোপের জার্মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি বলে গত বুধবার মন্তব্য করেছেন দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলার আবেদন জানান তিনি। তবে কঠিন সতকর্তা অবলম্বন করায় ইতালির চেয়ে কম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে জার্মানি। 

জার্মানির বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটির বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দ চলছে। মানুষের সতর্কতার কারনে করোনা ভাইরাস কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ১০ দিনের মধ্যে জার্মানি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। করোনা ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য কোয়ারান্টিনের শর্ত মেনে চলছেন মানুষজন। নিত্য প্রয়োজনীয় বড় দোকান, খাবার ও ঔষুদের দোকান বাদে কোন ধরেন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান খোলা নেই। কাজ বন্ধ থাকলেও সরকার খাদ্য ও জরুরী সেবা চালু রেখেছে। নাগরিকদের জন্য এসব প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে নাগরিকদের বীমা সুবিধা থাকায় ক্ষতির সম্ভাবনা কম বলে মনে করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। 

মানুষজন প্রথম দিকে অতিরিক্ত ভোগ্যদ্রব্য ক্রয় করলেও সরকারের হস্তক্ষেপে বিষয়টি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য রাখা হচ্ছে না। বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। 

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে চ্যান্সেলর মের্কেল বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে জার্মানিতে বসবাসরত প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্বজ্ঞানের প্রয়োজন। প্রত্যেককে সংক্রমণ এড়াতে সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।’বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে কর্তৃপক্ষ যে নিয়ম বেঁধে দিচ্ছে, তা মেনে চলার আবেদন জানান তিনি। তবে এখনই দেশজুড়ে কারফিউ ঘোষণার কোনো সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেননি মের্কেল। একই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আরও কড়া নিয়মের পূর্বাভাস দেন তিনি। দেশের এমন কঠিন অবস্থায় ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জার্মান চ্যান্সেলর।

জানা যায়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে জার্মানিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার মানুষ। শুক্রবার বিকেলে এ প্রতিবেদন তৈরী করা পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ১২ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ৩২ জন। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বন্ধ করা হয়েছে দেশটির সীমান্ত। গত সোমবার থেকে দেশটির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগমও। 

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৭৫টি দেশে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বিশ্বের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার জন। শুক্রবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটিতে বর্তমানে ২ লাখ ৩১ হাজার ২২৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

যেখানে উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০৫ জনে। আর চীনে মৃত্যু হয়েছিল ৩ হাজার ২৪৮ জন। এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে এ ভাইরাসে ১ হাজার ২৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। স্পেনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৬৭ জন। আক্রান্ত ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৩ জনে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪২৭ জন। ফ্রান্সে মারা গেছেন ৩৭২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার। 

এ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ভারতজুড়ে কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার। ভারতে মারা গেছেন ৪ জন এবং আক্রান্ত দেড় শতাধিক। বাংলাদেশ শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন এবং ১ জন মারা গেছেন। 

লেখক: জার্মান প্রবাসী ও ব্যবসায়ী

এমএস/