করোনায় বিশ্বজুড়ে প্রাণহানি ১৩ হাজার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:০৪ এএম, ২২ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১০:০৫ এএম, ২২ মার্চ ২০২০ রবিবার
মহামারি রূপ পাওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বিশ্বের ১৮৩টি দেশে ছড়িয়েছে। এতে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছে ইউরোপ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা। সময়ে সাথে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এতে মহামন্দার শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে নতুন করে ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ভাইরাসটির প্রকোপে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৫শ জন।
এর মধ্যে বর্তমানে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬৯১ জন হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। যাদের বড় একটি অংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৯০ হাজার মানুষ।
আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ১ হাজার ৮৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে চীনকে ছাড়িয়েছে ইতালি।
আজ রোববার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
আক্রান্ত ও প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইউরোপের দেশ ইতালিতে। যেখানে একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন ৮০০ জন। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩২ জনে।
দেশটিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছয় হাজার ৫৫৮ জনের শরীরে ছড়িয়েছে। যাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার পাঁচশ ৫৭৮ জনে। তবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ছয় হাজার ৭২ জন।
তবে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দেশটির লম্বার্ডিয়া অঞ্চলে। এ পর্যন্ত ইতালিতে ১৮ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবারই দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যায়।
ইতালির পরই আক্রান্তের দিক থেকে ইরানকে ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ৩২৬ জনের।
আক্রান্তের সংখ্যায় ইরানকে পেছনে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। ট্রাম্পের দেশে বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২ হাজার ১৭৭ জন, যেখানে মারা গেছেন ২৭৮ জন।
এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। যেখানে প্রতিনিয়ত ভারি হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের মিছিল। দেশটিতে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ১২৩ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ৬৪৪ জন।
এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি। গত শুক্রবার ১০ হাজার বন্দিকে ক্ষমা করে দেন তিনি।
এরপরই ফ্রান্স। ইউরোপের দেশটিতে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির ঘটনা। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজারেরও বেশি নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে মোট সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। যার বিপরীতে মারা গেছেন ৫৬২ জন নাগরিক।
তবে জার্মানিতে আক্রান্ত (১৪ হাজার) ও মৃতের (৪৪ জন) সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত-৮ হাজার ৮০০ জনের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের, যুক্তরাজ্যে ৪ হাজার আক্রান্তে মারা গেছেন ২৩৩ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৬ হাজারের বেশি নাগরিক, সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন।
এদিকে, প্রাণঘাতি ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ভারতজুড়ে চলছে কারফিউ। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ রোববার থেকে কারফিউ ঘোষণা করেন।
প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক এই কারুফিউ সবাইকে মানতে হবে। এই সময়ে কাউকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন মোদি। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ আক্রান্ত হয়নি। অপরিবর্তীত রয়েছে মৃতের সংখ্যাও।
কেউ মারা না গেলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে শ্রীলংকায়। সেখানে ৭২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ভয়াবহ অবস্থার দিকে পাকিস্তান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪৫৭ জনের শরীরের ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। যেখানে মারা গেছেন ৩ জন।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার প্রকোপ। সংখ্যায় কম হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন আরও একজন। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৪ আর মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
গত এক মাসে বিদেশ থেকে লাখের বেশি মানুষ দেশে ফিরলেও কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ১৫ হাজারের মতো। এর মধ্যে অনেকে আবার মানছেন না কোয়ারেন্টাইনের শর্ত। ফলে, যেকোনো সময় ভাইরাসটি ব্যাপক বিস্তার করতে পারে।
অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো সমাগম। কয়েকটি জেলায় বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত। বন্ধ করা হয়েছে সারাদেশের বার।
আর সবশেষ গতকাল শনিবার সমালোচনার মুখেও ৩টি আসনে উপ-নির্বাচন হলেও আগামী চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে সবধরণের নির্বাচন আপাতত স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, অনেকে করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। করোনার প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও। করোনায় সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য মজুদের কথা জানানো হলেও এক শেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের অধিকপণ্য কেনার প্রবণতায় দাম বেড়েছে চাল, ডালসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের।
তবে, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত অভিযানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে খাদ্যপণ্যের দাম।
এআই/