জবাব দেবে কে?
মঈন বকুল
প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০১:০৫ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২০ সোমবার
বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমণের দিক থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ঘটেছে মৃত্যুও। সম্প্রতি এই মহামারি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে এগিয়ে আসছে। তবে এ যাত্রায় পিছিয়ে আছে দেশের বড় বড় ব্যক্তি, গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠান। এই দুর্যোগ মুহূর্তে কেন তারা মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছে না তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। অনেকের প্রশ্ন, এসবের জবাব দেবে কে?
গত বুধবার করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বিপুল সংখ্যক টেস্ট কিটসহ জরুরি চিকিৎসাসেবা দিয়ে সহযোগিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।
দূতাবাস জানায়, আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলাদেশিদের জন্য প্রচুর পরিমাণে টেস্ট কিটসহ জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহামারি প্রতিরোধে চীন সবসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হবে।
এছাড়া বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে মাস্ক, টেস্ট কিট আর নিরাপত্তা পোশাক অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনের অনলাইনভিত্তিক খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা নিজের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।
জ্যাক মা লিখেছেন, তারা ১৮ লাখ মাস্ক, দুই লাখ ১০ হাজার টেস্ট কিট, ৩৬ হাজার নিরাপত্তামূলক পোশাক দেবে। সেই সঙ্গে ভেন্টিলেটর এবং থার্মোমিটারও দেয়া হবে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি এসব সরঞ্জাম পাবে আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
এছাড়া মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর স্বপ্না ভৌমিকের নেতৃত্বে বুয়েটের একদল অ্যালামনাই সদস্য করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করছেন সুরক্ষা পোশাক।
শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছিল- করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশের চিকিৎসকদের জন্য নেই পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই্)। যা দেশজুড়ে করোনা মোকাবিলার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। চিকিৎসকরাও সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমনই দুশ্চিন্তার মধ্যে সুখবর দেন স্বপ্না ভৌমিক।
এছাড়াও মানুষ আতঙ্কের পাশাপাশি নিজের অবস্থান থেকে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন। অনেকেই নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে।
দেশের এই বিপদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, কেন বিদেশিদের প্রতি আমরা তাকিয়ে আছি? আমাদের যা আছে তাই নিয়ে কেন নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না। কেন আমাদের দেশের বড় বড় গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে না?
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে দেশের এই ক্রান্তিকালে বিদেশি দেশ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে সেখানে দেশের ব্যাংক, গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানগুলো কই? এত এত ব্যাংক, এত এত ইস্যুতে বিভিন্ন তহবিলে দান করে, এখন তারা চুপ কেন? এলাকার এমপি-মেয়ররা কই? তাদের ভূমিকা কী এই বিপদে?
বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যারা যাকাত দেয়ার নামে ফুটানি মারে তারা আজ কোথায়? যারা শাড়ি লুঙ্গি বিলাতে গিয়ে মানুষ মারে। তারা তো এই যাকাতের টাকা গরীবদের দিয়ে কেন বলছে না, ‘এই টাকা দিয়ে চলো, এক মাস আর ঘর থেকে বের হইয়োনা।’
এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, দেশের এই ক্রান্তিকালে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি গার্মেন্টস মালিকরা কোথায়? যেখানে দিনের পর দিন কষ্ট, শ্রম আর মেধা দিয়ে শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী করে তুলছে। যেখানে মালিকদের আরও বিত্তশালী করছে। সেই শ্রমিকদের আজ নিরাপত্তা দেবে কে? পোশাক শিল্প আজ বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। তাহলে তাদের দায়িত্ব নেবে কে?
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ১৮৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২ জন মারা গেছে ও ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ৫৯১ জনে পৌঁছেছে। যেখানে চীনকে ছাড়িয়েছে ইতালি।
গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি রূপ পাওয়া ভাইরাসটিতে বিশ্বব্যাপী নতুন করে অন্তত ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া ভাইরাসটির প্রকোপে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৮১ জন। যাদের বড় একটি অংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় ৯৬ হাজার ২২৯ জন। আক্রান্তদের প্রাণ গেছে আরও ১ হাজার ৫৯১ জনের।
আক্রান্ত ও প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপের দেশ ইতালিতে। যেখানে শনিবার ৮০০ জনের প্রাণহানি ঘটনার পর নতুন করে ৬৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ জনে।
নতুন করে ৫ হাজার ৫৮০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এতে করে বর্তমানে ইতালিতে মোট আক্রান্ত ৫৯ হাজার ১৩৮ জন। তবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ছয় হাজার অন্তত ১০০ জন। প্রাণ হারাদের মধ্যে ১৮ জন চিকিৎসকও রয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস উৎপত্তিস্থল চীনে টানা ৩ দিন স্থিতিশীল রয়েছে। চিকিৎসকদের বীরত্বপূর্ণ সেবায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষায় এশিয়ার দেশটি। তবে থামছেই না ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল।