এই শোষিত দুর্ভাগা দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই আমার স্বপ্ন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৮ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২০ সোমবার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৬ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে ঘোষণা করেন যে, জনগণের অপরিসীম প্রীতি, আর্শিবাদ এবং সহযোগিতার জোরে তাঁহার দল ও সরকার যাহারা বিদেশে দেশের মান-মর্যাদাকে হেয় করার জন্য এবং বিদেশি সাহায্য লাভের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়া দেশের অগ্রগতি প্রতিহত করিতে তৎপর রহিয়াছে, সেই সব চক্রান্তকারীকে নির্মূল করিয়া দিবে। তিনি বলেন যে, এইসব দুষ্কৃতিকারী বিদেশি স্বার্থে ও সাহায্যে প্ররোচিত হইতেছে।
জনগণের শক্তি ও ভালোবাসায় প্রধানমন্ত্রী পুনরায় তাঁহার দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন। বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি গণমানুষই তাঁহার অস্ত্র, তাঁহার শক্তি। দেশের বিপজ্জনক দুশমনদের সম্পর্কে সাবধান থাকার জন্য তিনি জনসাধারণকে পরামর্শ দেন এবং তাহাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দেওয়ার জন্য আবেদন জানান।
গণবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধীদের উৎখাত করার জন্য এবং দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য তিনি পুনরায় জনগণের প্রতি আহবান জানান। এই ধরনের লোকজনকে পাকড়াও করিয়া পুলিশের নিকট সোপর্দ করার জন্যও তিনি আহবান জানান।
বঙ্গবন্ধু শ্রোতাদের স্মরণ করাইয়া দেন যে, জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সমাজবিরোধীদের নির্মূল করা সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধুও আবেগ উদ্বেলিত কণ্ঠে তাঁহার জন্মস্থান, গোপালগঞ্জের স্মৃতিচারণ করেন। অশ্রুসজল নয়নে আবেগ রুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন যে, তিনি ক্ষমতা, মর্যাদা বা পদের জন্য রাজনীতি করিতেছেন না, বাংলার জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির জন্যই তিনি রাজনীতির ময়দানে নামিয়াছেন।
তিনি বলেন, এই দুর্ভাগা, বঞ্চিত ও শোষিত ভূখণ্ডকে সত্যিকার সোনার বাংলায় পরিণত করাই আমার একমাত্র স্বপ্ন-সাধ।
বঙ্গবন্ধু তাঁহার কণ্ঠের সমগ্র জোর দিয়া ঘোষণা করেন যে, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতনে যাহারা বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতা করিয়াছে, আইনের দরবারে তাহাদের অবশ্যই বিচার হইবে।
দেশের খাদ্য সমস্যার কথা উল্লেখ করিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন যে, দেশের ঘাটতি পূরণের জন্য তাঁহার সরকার বিদেশ হইতে বিপুল পরিমাণ খাদ্য আমদানি করিয়াছে। আগামী দিনগুলিতে যাহাতে দেশে কোন খাদ্য ঘাটতি দেখা না দেয় তজ্জন্য সরকার আরও খাদ্য সংগ্রহ করিতেছে।
বঙ্গবন্ধু বলেন যে, অবশ্য দেশ এইভাবে চলিতে পারে না। খাদ্য ও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের জন্য জাতি পরনির্ভর হইয়া থাকিতে
পারে না। আমাদের অবশ্যই যথাসম্ভব শীঘ্র খাদ্যে স্বনির্ভর হইতে হইবে।
স্বজনের সান্নিধ্যে
গোপালগঞ্জের অধিবাসীরা আজ অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধুকে এক বিরোচিত সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।
বঙ্গবন্ধুকে শুধু একনজর দেখার জন্য নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে হাজার হাজার লোক এই ছোট শহরে ভাঙ্গিয়া পড়ে। পুত্র শেখ কামাল ও রাসেলসহ তিনি হেলিকপ্টারযোগে এখানে অবতরণ করিলে জনতা মুহূর্মুহু জয়ধ্বনিতে তাঁহাকে স্বাগত জানায়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা তাঁহাকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করেন।
স্থানীয় স্টেডিয়ামে পুলিশ বাহিনীর একটি দল তাঁহাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে তিনি অপেক্ষমান স্থানীয় নেতাদের সহিত করমর্দন করেন।
হেলিবন্দর হইতে তিনি নিকটবর্তী একটি ছোট ঘরে যাইয়া উপস্থিত হন, এখানে তাঁহার শৈশব কাটিয়াছিল। ঘুরিয়া-ফিরিয়া তিনি বাল্যকালের স্মৃতিচারণ করেন। সেখান হইতে তিনি ময়দানের জনসভায় গমন করেন।
সূত্র: এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ (গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত)
এএইচ/