ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মোংলায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি যাত্রীরা

মোংলা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৫:২১ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২০ সোমবার

মোংলা বন্দর থেকে বিভাগীয় শহর খুলনা অথবা জেলা শহর বাগেরহাটসহ সড়ক পথে দেশের অন্যান্য জায়গায় যারা প্রতিনিয়ত এ মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাসে চলাচল করে থাকেন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। 

মোংলা থেকে খুলনা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রায় তিন ঘন্টায়। এ বিষয়ে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের হাতে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন। 

সম্প্রতি (গত ১১ মার্চ) মোংলার বাঁধন যুব ও ক্রীড়া সংঘ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নানের কাছে খুলনা-মোংলা মহাসড়কে পরিবহন ব্যবস্থার ভোগান্তি দূরিকরণ প্রসংঙ্গে স্মারক লিপি প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে মোট ৭টি দাবি জানানো হয়। যা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এর আগে এ রুটে বহুবার সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানি হলেও আইন শৃঙ্খখলাবাহিনী এসব প্রতিরোধে তেমন কার্যকরি ভূমিকা নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলার সাথে বিভাগীয় শহর খুলনার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। সাধারণত এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় এক থেকে সোয়া ঘন্টা। কিন্তু এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী গাড়িগুলো প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছায়। 

এ নিয়ে যাত্রী সাধারণের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করা, গাড়ির মধ্যে গাদাগাদি করে দাড়িয়ে যাত্রী নেয়া, যাত্রীদের সাথে পরিবহন ষ্টাফদের দূর্ব্যবহার ও খারাপ আচরণ, অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই, ছাদে যাত্রী ওঠানো, সিটের সল্পতাসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে যাত্রী সাধারণ পরিবহন শ্রমিকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। 

এ নিয়ে কারো যেন বলার কিছু নেই এমনই বক্তব্য যাত্রী সাধারণের। কেউ প্রতিবাদ করলেই পরিবহন শ্রমিক ও ড্রাইভারদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এ যেন এক জিম্মি দশা।

মোংলা-সোনাডাঙ্গা ও মোংলা-রুপসা রুটে প্রতিনিয়ত সরাসরি এক্সপ্রেস সার্ভিস গাড়ি চলছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া মোংলা-বাগেরহাট ও রুপসা রুটেও লোকাল গাড়ি চলে আসছে। অপরদিকে মোংলা থেকে চট্রগ্রাম ও উত্তরযঙ্গ গাড়ি মিলিয়ে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত প্রায় ৬০/৭০টি গাড়ি প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। 

এসব রুটের প্রতিটি গাড়িরই একই অবস্থা। সরাসরি বা এক্সপ্রেস সার্ভিসের গাড়িতে প্রতিটি ষ্টপজেই যাত্রী ওঠানো ও নামানো হয়। এছাড়া মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। 

মোংলা থেকে খুলনা বা বাগেরহাটে যাবার পথিমধ্যে দিগরাজ ও কাটাখালীতে অন্তত ২০ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল ওঠানো হয়। একইভাবে খুলনা বা বাগেরহাট থেকে মোংলায় আসার পথিমধ্যে দিগরাজ ও কাটাখালীতে দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি দাড় করিয়ে রাখা হয়। এছাড়া খুলনা থেকে মোংলায় আসার সময় জিরো পয়েন্ট ও সাচিডাঙ্গাতেও দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়। 

যাত্রীরা মাঝে মধ্যে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে কাছে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা কার্যকরি হয়না বলে সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।এছাড়া খানা খন্দ ও রাস্তা ব্যস্ত থাকায় গাড়ি যাতায়াতে সময় বেশি লাগছে। 

অপরদিকে, এ মহাসড়কে বড় বড় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করাতেও গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে হয় ড্রাইভারদের। অবশ্য মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেন।

খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কর্মচারী (ষ্টাটার) আ. জলিল বলেন, ‘বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি এ রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অতিরিক্ত পণ্য ট্রাকে বোঝাই করে ধারণ ক্ষমতার বাইরে এ রুটে চলাচলকারী যানবাহনগুলোয় রাস্তার বড় ক্ষতি সাধন করছে। এসব প্রভাবশালী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ট্রাক ও লরি অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করলেও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।’

এ ব্যাপারে বাগেরহাট আন্তঃজেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তালুকদার আ. বাকি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে শ্রমিকরা যাত্রীদের সাথে দূর্ব্যবহার করে থাকেন এটা সত্যি। তবে অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেই।’

ইদানিং বাসের মধ্যে গাগাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এ ছাড়া তিনি আন্তঃজেলা মহাসড়কে নছিমন করিমন বন্ধসহ সড়কে অন্যান্য ফিটনেটবিহীন পরিবহন, লরি ও ট্রাক বেপরোয়া চালানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এদিকে, সুনির্দিষ্ট সময় ও নিরাপদে এ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারে এমন দাবিই জানিয়েছেন এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ। 

এআই/আরকে