করোনা থেকে বাঁচতে কেন দু`মিটার দূরে থাকতে হবে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৫১ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২০ সোমবার
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দু'টি করণীয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। একটি হলো নিয়মিত অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। দ্বিতীয়টি হলো সামাজিক মেলামেশা কমিয়ে দেয়া। এর একটা উপায় হলো বাড়িতে থাকা, যতটা সম্ভব বাইরে না বেরুনো। আর যদি বেরুতেই হয় তাহলে অন্য মানুষদের চাইতে অন্তত দুই মিটার বা ৬ ফিট দূরে থাকা।
কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, ঠিক এই দুই মিটার দূরত্বে থাকার কথাই কেন বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
কারণ হলো, লোকের হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে আপনার দেহে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায় - যদি আপনি কমপক্ষে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকতে পারেন।
কীভাবে তা সম্ভব হয়? তারও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দুটি প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর এবং ঘন ঘন শুকনো কাশি।
হাঁচি-কাশির সাথে একজন মানুষের মুখ দিয়ে সবেগে বেরিয়ে আসে অগণিত পানির বিন্দু মিশ্রিত বাতাস - যে বাতাসটা আসছে ফুসফুস থেকে।
আর করোনাভাইরাস বাসা বাঁধে তার শরীরের আর কোথাও নয়, এই ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রেই।
সুতরাং যদি এই কাশি দেয়া লোকটি ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়ে থাকেন - তাহলে জানবেন, তার প্রতিটি কাশির সাথে বাতাসে বেরিয়ে আসছে অসংখ্য করোনাভাইরাস। এবং এই ভাইরাসের বাহন হলো কাশির সাথে বেরিয়ে আসা অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দুগুলোই - যাকে ইংরেজিতে বলে ড্রপলেটস।
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী নাতালি ম্যাকডারমট বলছেন, কেউ যখন হাঁচি কাশি দিচ্ছে তখন এই ড্রপলেটসগুলোর বেশিরভাগই দু মিটারের বেশি যেতে পারে না। দু-চারটা অবশ্যই যায়, কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি হয় - যদি আপনি ড্রপলেটসগুলোর দু' মিটারের মধ্যে থাকেন।
অনেক বিজ্ঞানী বলেন, সূর্যের আলোয় যে অতিবেগুনী রশ্মি বা আলট্রাভায়োলেট রে থাকে - তা বাতাসে ভাসমান ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে। নাতালি ম্যাকডারমট বলছেন, কথাটা ঠিক, কিন্তু বাড়ির বাইরে বা রোদের মধ্যে আছেন বলেই যে আপনি নিরাপদ তা নয়।
তার কথা "আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে ঠিকই কিন্তু এটা কিন্তু এমন নয় যে এ রশ্মি লাগার সাথে সাথে ভাইরাস মারা যায়। সে জন্য করোনাভাইরাসকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রোদের সংস্পর্শে থাকতে হবে।"
"তাই কল্পনা করুন , একজন কাশি দিয়ে বাতাসে ড্রপলেট ছড়িয়ে দিলো আর সাথে সাথেই শ্বাস নেবার মাধ্যমে আপনার দেহে তা ঢুকে গেল, তাহলে অতিবেগুনি রশ্মি তো ভাইরাসটাকে মারার যথেষ্ট সময় পেলো না।"
"দু' নম্বর, অতিবেগুনি রশ্মি একটা পানির বিন্দুর বাইরের দিকে থাকা ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে কিন্তু তার ভেতরে থাকা ভাইরাসগুলো দিব্যি জীবিত থাকতে পারে।"
সে কারণেই, নাতালি ম্যাকডারমট বলছেন - লোকে যদি করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে চায় তাহলে তাকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মগুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলতে হবে।
তিনি বলছেন, বাড়ির ভেতরে আপনার পরিবারের লোকদের সাথে হয়তো দু মিটার দূরত্বে থাকার দরকার নেই। কিন্তু যখন বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন তখন এ নিয়ম মানতে হবে। যদি আপনি বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে যান, তাহলে সেখানে অন্য একটা পরিবারের সাথে পিকনিক করবেন না। অন্য লোকের সংস্পর্শে আসাটা যত কম হবে ততই ভালো। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসি