দুইশো ছড়ালো করোনাক্রান্ত দেশ, মৃত বেড়ে ১৮৮৯২
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ২৫ মার্চ ২০২০ বুধবার
একে একে বিশ্বের দুইশটি দেশে ছেয়ে গেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। প্রতিনিয়ত ভারি হচ্ছে লাশের সারি।
চীন থেকে শুরু হলেও ভাইরাসটি এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে পৃথিবীব্যাপী। যার সবচেয়ে ভয়াবহ রুপ দেখছে ইউরোপ। জনজীবন থেকে শুরু করে বিশ্বের অর্থনীতির চাকার মুখ থুবড়ে পড়েছে করোনায়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মহামন্দার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটি প্রাণ কেড়েছে ২ হাজার ৩৭৮ জনের। যার অধিকাংশই ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনার থাবায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ হাজার ৮৯২ জনে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ৪ দেশ। ফলে ভাইরাসটির প্রকোপ ছড়িয়েছে বিশ্বের দুইশটিরও বেশি দেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ২২ হাজার ৬১৪ জনে পৌঁছেছে। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭৯ জন।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে।
গত চারদিন স্থিতিশীল থাকার পর সোমবার নতুন করে আক্রান্ত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চীনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমিত হয়েছে আরও ৪৭ জন। ফলে দেশটিতে প্রাণহানি বেড়ে ৩২ হাজার ২৮১ আর ৮১ হাজার ২১৮ জন আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চীনের বাহিরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহতা অবস্থায় ইতালি। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে প্রতিদিনই সেখানে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যেখানে নতুন করে ৭৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জন।
নতুন করে ৫ হাজার ২৪৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। আর এ নিয়ে ইতালিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৭৬ জনে। তবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আট হাজার ৩২৬ জন। প্রাণ হারাদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসকও রয়েছেন।
ইতালির পথেই হাটছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে ভাইরাসটি থাবায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সারিও। এতে গোটা স্পেন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। গতকাল থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মানুষ। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার পেরিয়েছে। যেখানে মারা গেছেন ২ হাজার ৯৯১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮০ জন।
সময় যত গড়াচ্ছে ইউরোপের দেশটিতে করোনার তাণ্ডব ততই বেড়ে চলছে। দেশজুড়ে লকডাউন জারি করায় ৪ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ এখন গৃহবন্দি রয়েছেন।
অপরদিকে, ট্রাম্পের দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে নতুন করে ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ সংক্রমণটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে করে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৮০৮ জনে।
মারা গেছেন আরও ২২২ জন। যেখানে এখন ভাইরাসটিতে প্রাণ গেছে ৭৭৫ জনের। সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার সংখ্যা ৩৭৮। যা আক্রান্তের তুলনায় খুবই নগন্য।
এদিকে জার্মানিতে একদিন আগে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের ঘটনা ঘটলেও গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। সেখানে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯ জনে।
এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। দেশটিতে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ১২২ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৯৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৪৪৮।
ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল ততটা প্রকোপ না হলেও কোনো একেবারেই পিছিয়ে নেই ফ্রান্স। ইউরোপের এই দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
ইউরোপের এই দেশটিতে নতুন করে মারা গেছেন ২৪গ জন। ফলে, ভাইরাসটি এখন পর্যন্ত প্রাণ কেড়েছে ১ হাজার ১০০ জনের। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩০৪ জনে।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত-৯ হাজার ৩৭ জনের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ১২০ জনের, যুক্তরাজ্যে ৮ হাজার ৭৭ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৪২২ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৭৭ নাগরিক, সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১২২ জন, নেদারল্যান্ডসে ৫ হাজার ৫৬০ জনের বিপরীতে মারা গেছেন ২ জন।
এদিকে, প্রাণঘাতি ভাইরাসটির বিস্তার রোধে নতুন আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২১ দিনের জন্য পুরো ভারতজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে দেশব্যাপী কারফিউয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নাগরিকদের মাঝে সচেতনতার অভাবে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ফলে, কঠোরতার দিকে যেতে হয় তাকে।
লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। হাসপাতালগুলো কতটা প্রস্তুত তা নিজ চোখে দেখতে শহরের সব হাসপাতাল ঘুরে দেখেন তিনি। সাধারণ মানুষকে লকডাউনের আওতায় আনতে মারমুখী অবস্থায় প্রশাসনও। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সাড়ে ৮ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চাল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এতেও ভারতে থেমে নেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যেখানে নতুন করে ৩৭ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩৬ জনে। মারা গেছেন এখন পর্যন্ত ১০ জন।
অন্যদিকে, ভয়াবহ অবস্থার পথে পাকিস্তান। দেশটিতে নতুন করে প্রায় শতক ব্যক্তির দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৭১ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন।
প্রকোপ থেমে নেই দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ বাংলাদেশেও। সংখ্যায় কম হলেও প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন আরও একজন। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ জনে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ জন।
করোনার সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা এখন পর্যন্ত মোট ৫ জন সুস্থ হয়েছেন আর ৩০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
গত এক মাসে বিদেশ থেকে দেড় লাখের বেশি মানুষ দেশে ফিরলেও কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ২০ হাজারের মতো। এর মধ্যে অনেকে আবার মানছেন না কোয়ারেন্টাইনের শর্ত। ফলে, যেকোনো সময় ভাইরাসটি ব্যাপক বিস্তার করতে পারে।
অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো সমাগম। কয়েকটি জেলায় বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত। বন্ধ রয়েছে সারাদেশের বার ও সারাদেশের সুপারমার্কেটগুলো। সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয়েছে চট্টগাম সিটিসহ ২টি আসনের উপ-নির্বাচন।
আর সবশেষ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সতর্কতা তৈরিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে মাঠে নেমেছে সশস্ত্রবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে তারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করবেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এতে করোনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও গতকাল লাখ লাখ মানুষ দেশের বাড়িতে ফিরে যান। সংকট মোকাবেলায় গণপরিবহন, বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপরও অনেককে পিকআপ ভ্যান ও কিংবা মালবাহী ট্রাকে করে বাড়িতে ফিরতে দেখা যায়।
এআই/