শিক্ষাবোর্ডের বৈঠক থেকে ‘করোনাশঙ্কায়’ ১৬ শিক্ষক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২০ বুধবার
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক বৈঠকে যোগ দিয়ে এখন ‘করোনাশঙ্কায়’ তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন শিক্ষক। বুধবার (২৫ মার্চ) বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর করোনা আতঙ্কে ভুগছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তবে বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী।
জানা গেছে, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কক্সবাজার অঞ্চলের কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকটি হয়েছে গত রোববার (২২ মার্চ) সকালে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তীর কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক এবং কক্সবাজার অঞ্চলের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষরা পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই বৈঠকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের এক অধ্যক্ষও ছিলেন।
গত ১৩ মার্চ ওই অধ্যক্ষের ষাটোর্ধ্ব মা ও ছোট ভাই সৌদিআরবে ওমরাহ শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। পরে তারা নগরীর নিউ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ৭ নম্বর সড়কের ৬৪ নম্বর ভবনের দোতলায় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ওই ছেলের (ছোট ভাই) বাসায় ওঠেন। সেখানে একদিন অবস্থানের পর অধ্যক্ষের মা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীস্থ তার বাড়িতে চলে যান। সেখানে গত ২১ মার্চ (শনিবার) বিকেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সংবাদমাধ্যমকে ওই অধ্যক্ষ জানান, রোববার (২২ মার্চ) সকালে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বৈঠকে যোগ দেন। তবে একই গাড়িতে হাসপাতালে গেলেও সেভাবে মায়ের সংস্পর্শে আসেননি বলে দাবি এই শিক্ষকের।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধা নারী শনাক্তের বিষয়টি প্রকাশ হলে রাতেই চান্দগাঁও ও বাকলিয়ার দুই ভবন লকডাউন করা হয়। কক্সবাজারে ওই নারীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া ডাক্তার এবং নার্সদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, মায়ের করোনা শনাক্তের বিষয়টি জানার পর ওই অধ্যক্ষ নিজেও এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলেই জানিয়েছেন।
মায়ের অসুস্থতা জেনেও বৈঠকে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেপুটি কন্ট্রোলারকে আমি বারবার বলেছি যে, আমার মা অসুস্থ। এখন আমার কোনও মিটিংয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না। তবুও তিনি জোর করে আমাকে মিটিংয়ে নিয়ে গেছেন।
তবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মায়ের অসুস্থতার বিষয়টি তিনি তাদের জানাননি। বিষয়টি জানা থাকলে তারা মিটিংয়ে আসতে দিতেন না।
এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে রীতিমত আতঙ্ক তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তাদেরই কয়েকজন জানান, ওই অধ্যক্ষকে বৈঠকে এনে সবাইকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। মিটিংয়ে সোলায়মান ছাড়াও যে ১৫ জন ছিলেন, তাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে যারা শিক্ষাবোর্ডে নিয়মিত কাজ করছেন, তাদের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কক্ষে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। সব মিলিয়ে শিক্ষাবোর্ডে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ওনার মা যে অসুস্থ বা করোনায় আক্রান্ত হবেন এটা তো আমরা জানতাম না। উনিও আমাদের মায়ের অসুস্থতার বিষয়ে কিছু বলেননি। যেটা হয়ে গেছে, ঝুঁকির কিছুটা তো আছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ, আমরা দূরে দূরে ছিলাম। আর উনার মায়ের হলেও উনার তো করোনা নেই। এরপরও যারা বৈঠকে ছিলেন, সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী জানান, করোনা আক্রান্ত নারীর দুই ছেলের বাসা যেখানে আছে, সেখানে দুটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে। কক্সবাজার কলেজের যিনি অধ্যক্ষ, তিনি আক্রান্ত নন। এখনো তার অসুস্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মিটিংয়ে যারা ছিলেন, এটা তো সবার জন্য অবশ্যই ঝুঁকি তৈরি করেছে। এখন সবার উচিৎ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা।
এনএস/