দেশি রসুনে আগ্রহ কম ক্রেতাদের, চীনা রসুনে স্বাস্থ্যঝুঁকি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০ শুক্রবার
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চীন থেকে নতুন করে পণ্য আমদানি করতে পারছেন না দেশের ব্যবসায়ীরা। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি হঠাৎ করে দাম বেড়েছে চীনা রসুনের। ১২০টার রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। চীনা এসব রসুনে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও দেশি রসুনের দাম কম থাকা সত্যেও এতে ঝোঁক নেই ক্রেতাদের।
চীন থেকে বর্তমানে পণ্য আমদানি বন্ধ থাকলেও বাজারে প্রচুর পরিমাণে চীনা রসুন রয়েছে। অথচ দেশি রসুন প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতের এক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা রসুন স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকারক। অথচ গোটা বিশ্বের বাজারে যত রসুন বিক্রি হয়, তার ৮০ শতাংশের যোগানদাতা চীন। তবে এই চীনা রসুন স্বাস্থ্যের পক্ষে আদৌ ভাল নয়, এমনটাই জানাচ্ছেন ওইসব গবেষকরা।
গবেষনায় দেখা গিয়েছে, চীনে যে রসুন উৎপাদিত হয়, তাঁর মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায়। পরীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে, চীনে উৎপাদিত রসুনে বেশিমাত্রায় মিথাইল ব্রোমাইড ছাড়াও রয়েছে সিসা ও সালফাইড।
ভারতীয় গবেষকরা বলছেন, এই সমস্ত রাসায়নিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুবিধার নয়। পাশাপাশি, এই পদার্থগুলো ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। শরীরে শ্বাসতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকেও বিকল করে দেয় এই রসুন। এতেই শেষ নয়, রসুনকে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে ক্লোরিন ব্লিচ করা হয়, এটাই মারাত্মক ক্ষতি করে মানশরীরে।
জানা গেছে, চীন বিভিন্ন দেশে রসুন রপ্তানি করার সময় রাসায়নিক স্প্রে করে। রসুনে যাতে গেঁজ না ধরে, সেজন্য জাহাজে ওঠানোর আগে রাসায়নিক স্প্রে করতে হয়। ব্লিচ করা হয় মূলত, রসুনের গায়ের কালো ছোপ দূর করার ক্ষেত্রে।
যদিও চীন জানিয়েছে, তারা জৈবরসুন রপ্তানি করে। তবে এই জৈব রসুনও সমান ক্ষতিকর।
কীভাবে চীনা রসুনের থেকে সতর্ক থাকবেন?
চীনা রসুন চেনা মোটেও কঠিন কাজ নয়। বাজারে ঝকঝকে দাগবিহীন রসুন দেখে আহ্লাদিত হওয়া উচিত নয়। এই সুন্দর রসুন চীন থেকেই আমদানি করা হয়। দেশীয় রসুনের তুলনায় আমদানিকৃত চীনা রসুন আয়তনে এক নয়। অনেক ক্ষেত্রে এক হলেও, ওজনে যথেষ্ট হালকা। রসুন যাতে পচে না যায়, সেজন্য পানি বের করে নেওয়া হয়, তাই চীনা রসুন ওজনে যথেষ্ট হালকা। তাছাড়া চীনে রসুনের শিকর বাকরও থাকে না।
তাই দেশীয় রসুনের জৌলুস না থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় রসুনেই আস্থা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
যদিও রসুন আমদানিতে চীনের ওপর নির্ভরতা কাটানো কঠিন। তবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি বাড়ানো যায়। অবশ্য বর্তমানে চীনের বাইরে ওই দুই দেশ থেকে রসুন আমদানি হচ্ছে।
চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর রসুন আমদানি বিঘ্নিত হওয়ার দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে বাজারে রসুনের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে রসুন আমদানির পরিমাণ ও উৎস দেশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করা যায়, তার সুপারিশ করা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বছরে রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুন উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন। সেখান থেকে পচে যাওয়া রসুনের হিসাব বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। রসুনের চাহিদার ১৩ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয় বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।
ট্যারিফ কমিশন হিসাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদন পরিসংখ্যান ধরে। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দেয়, তার সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বড় ফারাক দেখা যায়। যেমন বিবিএসের হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুনের উৎপাদন ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের মূল উৎপাদনের হিসাবের চেয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার টন কম। একইভাবে বিবিএসের হিসাবে আদার উৎপাদন ৮০ হাজার টন, যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টন কম।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট ৫২ হাজার ৪৬১ টন রসুন আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। আর একই সময়ে আদা আমদানি হয়েছে মোট ৬৯ হাজার ৪৮১ টন। মোট আমদানির ৪১ শতাংশ চীন, ২৮ শতাংশ ভারত ও ২১ শতাংশ মিয়ানমার থেকে এসেছে।
এসএ/