ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ৩০ জানুয়ারি ২০২৫,   মাঘ ১৭ ১৪৩১

ধর্মীয় দৃষ্টিতে কোয়ারেন্টাইনের উপকারিতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০ শুক্রবার

যেসব ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু তিনি সুস্থ হতে পারেন, আবার নাও পারেন, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে কিন্তু কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি— এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে। কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়। কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে।

আইসোলেশন হচ্ছে, কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে বা ধরা না পড়লেও উপসর্গ থাকে তখন তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বিশেষ এই পদ্ধতিতে কোনো রোগীর হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র অন্য কারো সংস্পর্শে যাবে না। জীবাণু যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এজন্য রোগীকে যত রকম ব্যারিয়ার দেওয়া সম্ভব, আইসোলেশনে তা দেয়া হয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য, আর কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য। আইসোলেশনে কতদিন রাখা হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখা হয়।

মহামারিতে এই কোয়ারেন্টাইনের ধারণা সর্বপ্রথম যিনি দিয়েছিলেন তিনি হলেন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত রাইস ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং আন্তর্জাতিক বক্তা ড. ক্রেইগ কন্সিডাইন তার লেখায় এমনটি উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা ও সংবাদভিত্তিক ম্যাগাজিন নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।

আমরা খুব সহজভাবে বলি যে- রসুলুল্লাহ (স) হচ্ছেন কোয়ারেন্টাইনের পথ প্রদর্শক। রসুলুল্লাহ (স) এর নির্দেশ ছিল যে- যখন কোনো এলাকায় কোনো মহামারি ছড়ায়, ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায়, সেখানে কেউ যাবেও না, সেখান থেকে কেউ বেরও হয়ে আসবে না। পাশ্চাত্যের কোয়ারেন্টাইনের ধারণা আসে এরও ৭০০ বছর পর!

শুধু কোয়ারেন্টাইনের এই ধারণাই যে তিনি দিয়েছেন তা না; ওনার সাহাবীরা এটা পালনও করেছেন। রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরিয়াতে প্লেগ দেখা দিল। যে শহরে প্লেগ দেখা দিয়েছিল সেখানে আবু উবায়দা তখন কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন। হযরত উমর তাকে ওখান থেকে ডেকে পাঠালেন যে, ওখানে থাকলে তো সে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আবু উবায়দা খুব বিনয়ের সাথে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন- যে না। আমি রসুলুল্লাহ (স) এর হাদিস স্পষ্টভাবেই শুনেছি যে, ‘যদি আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত এলাকায় কেউ প্রবেশ করবে না এবং আক্রান্ত এলাকায় যে থাকবে সে ওখান থেকে বেরিয়েও আসবে না।’ এবং তিনি প্রথম কোয়ারেন্টাইন পালনকারী সাহাবী এবং তার সাথে যে সৈন্যদল ছিল কেউই ওখান থেকে বেরিয়ে আসে নাই।

এখন বুঝতে পারছেন যে কাজের নির্দেশ রসুলুল্লাহ (স) দিয়েছেন সেটা পালন করা, অনুসরণ করা কতটা পুণ্যের, কতটা সওয়াবের, কতটা উপকারি! অতএব আপনি যখন কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন, আপনি আল্লাহর রসুলের একটা নির্দেশ পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন, সৌভাগ্যবান হচ্ছেন- এই আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এবং এই কোয়ারেন্টাইন আপনার জন্যে আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হতে পারে। সেটা হোম-কোয়ারেন্টাইন হোক অথবা ক্যাম্প-কোয়ারেন্টাইন হোক বা হসপিটাল-কোয়ারেন্টাইন হোক। আপনি এই সময়টা নিজের মতো করে, নিজের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্যে, নিজের মনের পরিশুদ্ধির জন্যে, মননের পরিশুদ্ধির জন্যে, সৃজনশীলতার পরিশুদ্ধির জন্যে এবং ব্রেনটাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্যে এই সময়টা ব্যয় করতে পারেন। এবং এই সময়ে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে প্রাণায়ামের চর্চা করা, মেডিটেশনের চর্চা করা এবং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের সান্নিধ্য চাওয়া।

যারা সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী রয়েছেন- ওই সময়ও তারা তাদের একাগ্র নিমগ্ন প্রার্থনায় ডুবে গিয়ে একটা নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে পারেন। তো কারো যদি কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার সুযোগ হয় এটাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করে আনন্দিতচিত্তে কোয়ারেন্টাইন পালন করে নতুন সুস্থ-সবল মানুষ হিসেবে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেন।

আর আমাদের বাঙালিদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আট বছরের বালকের যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, তা ইউরোপ এবং আমেরিকার ২৫ বছরের যুবকেরও সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাই। কারণ আমরা নরমাল পানিতে গোসল করি। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করি। আর তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অনেকে এক মাস দুই মাসেও গোসল করে না। যার ফলে তাদের দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কখনও গড়ে ওঠে না। যে কারণে তাদের দেশগুলোতে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ এত বেশি। সেই তুলনায় আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ অনেক কম।

একে//