বড় বিপদে ছোট ব্যবসায়ীরা
মেহেদী হাসান আলবাকার
প্রকাশিত : ০৪:৩০ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৩৯ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০ শুক্রবার
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে মাস্টার্স পাশ করে শিক্ষকতা দিয়ে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন রেজবিন হাফিজ। স্বামী লেদার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছেন চামড়াজাত পণ্যের অনেক কারখানা। আর তাতেই এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মে তার।
শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে সাত লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। একটু একটু করে বাড়তে থাকে ব্যবসার কলেবর। এখন তার চামড়াজাত পণ্যের কারখানায় ৩৫ জন শ্রমিক-কর্মচারি। বাৎসরিক লেনদেন প্রায় কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি।
কিন্তু করোনা সংকটে চিন্তায় কপালে ভাজ পড়েছে তার। এরই মধ্যে সব অর্ডার বাতিল। বেতন, ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল মিলিয়ে মাসে খরচ তার সাড়ে তিন লাখ টাকারও বেশি। এখন ব্যবসা বন্ধ হলে এই খরচ কি করে যোগাবেন জানা নেই তারা।
“আগের যেসব অর্ডার ছিল সেগুলোর জন্য ফিনিশড প্রডাক্ট তৈরি করে ফেলেছিলাম, পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে অনেক বাড়তি কাঁচামালও কিনে প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছি। এগুলো এখন বিক্রির কোন উপায় নেই।’’ নিজের কারখানাতে বসেই এই প্রতিবেদককে বলছিলেন রেজবিন হাফিজ।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ ও নীতি সহায়তা দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন, যাদের মধ্যে ১৮ হাজারই নারী। রেজবিন ব্যবসা করছেন সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে। ফলে তার কিছুটা সক্ষমতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু যারা একেবারেই নতুন অথবা ব্যবসার জন্য বড় ধরনের ঋণ করেছেন তারা পড়েছেন আরও বিপাকে।
মরিপুরের আনোয়ারা আক্তার শিউলির ফ্যাশন হাউজের দুটি শো-রুম আর কারখানা মিলিয়ে মাসে খরচ ২ লাখ টাকা। ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার কাপড় ও কাঁচামাল কিনেছেন তিনি। তার উপর ব্যবসার জন্য ব্যাংক ঋণ আছে ২২ লাখ টাকা। যার জন্য প্রতিমাসে তাকে শোধ করতে হয় ৫২ হাজার টাকা।
শিউলি বলছেন, ‘কারখানা, শো-রুম সবই এখন বন্ধ কিন্তু মাস শেষে এগুলোর ভাড়াতো পরিশোধ করতে হবে। ব্যাংকের কিস্তি জুন পর্যন্ত দিতে হবে না, কিন্তু সুদতো গুনতে হবে। সরকার যদি এ সময় পর্যন্ত আমাদের ঋণের সুদটাও মৌকুফ করতো তাহলেও একটা বড় বাঁচা বাঁচতাম।
এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, এমন সংকটে আগে কখনোই মোকবেলা করতে হয়নি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের। ঋণের কিস্তি পরিশোধে ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসাই যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় উদ্যোক্তার বাকি খরচ আসবে কি ভাবে, বলছিলেন, ফাউন্ডেশনের পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না।
তিনি বলেন, এ সংকটে যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবে না তা অনেকটাই স্পষ্ট। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সমস্যায় পড়বেন শ্রমিক-কর্মচারিরাও। এজন্য এসএমই খাতের জন্য এখনই সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা উচিত।
তবে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা শুধুমাত্র এসএমই ফাউন্ডেশনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বলছে, দেশে মোট এসএমই ইউনিট আছে ৩৪ হাজার এবং সেখানে কর্মরত আছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে কোন সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আনা যে খুব সহজ কাজ নয়, এব্যপারে একমত সবাই।
বুধবারের ভাষণে প্রধামন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্টই উল্লেখ করা হয়েছে এ ধরণের শিল্পের শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন ভাতা পরিশোধে এ অর্থ ব্যায় হবে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগের ব্যবসাই স্থানীয় বাজার কেন্দ্রীক। ফলে তাদের পক্ষে এ তহবিল থেকে সহায়তা পওয়ার সুযোগ কম।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আমাদের সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে। তাই শুধুমাত্র সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদেরও উদ্যোগী হতে হবে বলে জানান, এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন।
তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এখন অনেক সামর্থ্যবান আছেন। তাদেরকে নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা যদি একটা তহবিল করতে পারি এবং কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ তা নির্ধারণ করে সহায়তা পৌঁছে দিতে পারি তবে এ সংকট মোকাবেলা করতে আমাদের তেমন সমস্যা হবে না। আর ব্যবসায়ীদেরও মনে রাখতে হবে আপনার শ্রমিক-কর্মচারি বাঁচলেই আপনার ব্যবসা বাঁচবে। তাই এই সংকটময় মুহুর্তে আপনি যা খান আপনার শ্রমিক-কর্মচারিও যাতে তা খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করবেন।
এসি