করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৩৫৯
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৭ এএম, ২৮ মার্চ ২০২০ শনিবার
ব্যাপকভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস। ভুগছে দুইশতকেরও বেশি রাষ্ট্র। ভাইরাসটিতে প্রাণহানির পাশাপাশি বড় ধাক্কা লেগেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে, যা এখন মন্দায় রূপ নিতে চলেছে।
করোনার ভয়াবহতা রুখতে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশসমূহ। বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত এ ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩ হাজার ২৮৬ জন। যার অধিকাংশই ইউরোপীয় ও আমেরিকান নাগরিক।
অন্যদিকে, ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা বিশ্বের ৬৫ হাজার ৩২১ জন মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এ নিয়ে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৫।
চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বুধবার চীন ও ইতালিকে ছাড়ানোর পর গতকাল দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে সেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৭০৭ জন।
অপরদিকে, কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক না থাকায় হু হু করে বাড়ছে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ৪০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। আগামী ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে প্রাণ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন গবেষকরা।
উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলোয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা ভাইরাস রিলিফ বিলে স্বাক্ষর করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই মূলত এ বিল পাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক রিলিফ বিলে স্বাক্ষর করেছি। এর মাধ্যমে আমাদের পরিবারগুলোকে, কর্মী ও ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। শিগগিরই আমরা এ সংকটাবস্থা থেকে উত্তোরণ পাবো।’
এদিকে, একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড নিয়ে প্রাণহানির তালিকায় সবার শীর্ষে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯১৯ জন। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ১৩৪ জন। আক্রান্তের ৮৬ হাজার ৪৯৮ জন।
ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে স্পেনও। দেশটিতে দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৮ জনে। বৃহস্পতিবার স্পেনে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। লকডাউন চলছে ইতালিতেও। তবুও লাশের লাইন ছোট হচ্ছে না। ফ্রান্সেও চলছে লকডাউন। গত একদিনে সেখানে ৩০০ জনের মৃত্যুর পর সংখ্যাটা এখন ১ হাজার ৯৯৫।
ইউরোপের আরেক কেন্দ্র যুক্তরাজ্যও লকডাউন। সেখানেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮১ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছেন ৭৫৯ জনের। যেখানে আরও এক বাংলাদেশি রয়েছেন।
ব্যাপকভাবে বিস্তার ছড়ানো দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে জার্মানির নামও। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে আক্রান্ত অর্ধলক্ষ হলেও দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৫১ জনের—যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে ইরানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার। দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় নাম উঠেছে ২ হাজার ৩৭৮ জনের।
এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যেমন নেদারল্যান্ডসে ৫৪৬, বেলজিয়ামে ২৮৯, সুইজারল্যান্ডে ২০৭, সুইডেনে ৯২, পর্তুগালে ৭৬, অস্ট্রিয়ায় ৫৮, ডেনমার্কে ৫২ এবং আয়ারল্যান্ডে ১৯, রোমানিয়ায় ২৪ এবং গ্রিসে ২৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা।
অস্ট্রেলিয়ায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কানাডায় মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের এবং ব্রাজিলে সেই সংখ্যাটা ৭৭। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রকোপ শুরু হলেও দেশটি তা নিয়ন্ত্রণ করেছে ভালোভাবেই। তবে সেখানেও ১৩৯ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ৮৭ এবং জাপানে ৪৭ জন করোনায় মারা গেছেন।
ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০ ছাড়ানোর পাশপাশি, মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২০ জনে। দেশটি এখন ২১ দিনের লকডাউনে আছে। এছাড়া পাকিস্তানে আক্রান্তের প্রায় ১ হাজার ৩৭৩। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। ফিলিপাইনে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ জন; আক্রান্ত ৮ শতাধিক।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সংখ্যা ৪৮ জনে, যার মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন।
গেল বছরের ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশে উহান শহরে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। তবে সেখানে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার হচ্ছে ধীরে ধীরে। চীনে নতুন করে স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা টানা কয়েকদিন না থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় দ্বিতীয় দফা বিষ্ফোরণের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এআই/