ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১০ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২০ শনিবার

শেখ মুজিব মানেই বাঙালির মৃত্যুঞ্জয়ী চেতনা। শেখ মুজিব মানেই সাম্য-অধিকার-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। শেখ মুজিব মানেই দেশের জনগণের প্রতি মানুষের প্রতি ভালোবাসা। শেখ মুজিব মানেই নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। শেখ মুজিব মানেই বাঙালির দিশা- আলোর দিশারী। শেখ মুজিব মানেই তো বাংলাদেশ, স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

তিনি ছিলেন বিশ্বের মানবতাবাদী ও শান্তিকামী মানুষের আদর্শ। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ ও তার নেতৃত্বে মন্ত্রমুগ্ধের মতো জাদুকরি শক্তি ছিল। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে একটুও ভাবেননি। নেতৃত্বের উচ্চতায় ও চরিত্রের দৃঢ়তায় রাষ্ট্রনায়ক জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আর কারও তুলনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু এমন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব; যিনি ত্যাগের মহিমা ও দেশপ্রেমের কঠিন পরীক্ষায় সম্পূর্ণরূপে উত্তীর্ণ।

তিনি বাঙালির প্রাণের প্রদীপ ও বাংলার আকাশের স্বাধীনতার উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধুই বাঙালির ইতিহাস, সমগ্র বাঙালি জাতি তার কাছে চিরঋণী। তাই আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের বিরল নেতৃত্ব, বিশ্ব নেতা; হাজারও গুণে গুণান্বিত আমাদের জাতির পিতা।

চেতনায় সব সময় ছিল তার দেশের জনগণের ও বিশ্বের মানুষের উন্নতি ও কল্যাণ। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম মহৎ গুণ ছিল সাধারণ মানুষের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ছিল প্রবল। দেশকে তিনি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অবিচল বিশ্বাস।

মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে নিজ সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের ‘আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা কী’ এ প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি।’ ডেভিড ফ্রস্টের ‘আপনার বড় দুর্বলতাটা কী’- এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসি।’ 

এ কথার মাধ্যমে জনগণের প্রতি জাতির পিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনগণের প্রতি বিশ্বাসেরও বিষয়টিও সুস্পষ্ট। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনটাই ছিল যেন মানুষকে ভালোবাসার। দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের অন্যতম দর্শন।

তিনি শুধু জনগণকে ভালোই বাসতেন না, বাংলার জনগণকে নিয়ে তিনি গর্ববোধও করতেন। সে কারণেই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কবিগুরুর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কবিগুরুর আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। বাঙালি জাতি প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারা মানুষ, তারা প্রাণ দিতে জানে। এমন কাজ তারা এবার করেছে, যার নজির ইতিহাসে নাই। ‘হে কবিগুরু আপনি এসে দেখে যান, আমার ৭ কোটি বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।’ 

ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের দিন বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, আমি সব ত্যাগ করতে পারি, তোমাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে পারব না।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ এর ভাষণে বলেন, ‘যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি, পারব না। এর আগে আমি অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব না। জনগণ আমাকে সে অধিকার দেয় নাই।’

এই কথা শেষ হতে না হতেই, তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ছিল বাঁশের লাঠির হাতে ধরে রাখা সংগ্রামী বাঙালি জনতা। চিৎকারে বিদীর্ণ করে তুলছিল গোটা রেসকোর্স ময়দান। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণগুলোর মধ্যে একটি ভাষণ এর অংশ এটি। এই অংশটুকুর মাঝে যে শক্তি, যে অর্থ আর যে গভীরতা তা আসলে স্বাধীন বাংলার বিকাশে অপরিমেয় গুরুত্ব বহন করে। বঙ্গবন্ধুর মুখের কথাই ছিল একটি রাষ্ট্রের শুন্য থেকে বেড়ে ওঠার মন্ত্র।

পাক শকুনের দলের হিংস্র আঁচড়ে যখন বাংলার নিরীহ জনপদ রক্তাক্ত, নিরীহ, শান্তিপ্রিয় বাঙালিকে তাঁতিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, বলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, 'আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।' বঙ্গবন্ধু বাংলার বাজারে বাজারে ঘুরে মুক্তির ঘ্রাণ বিক্রি করেছেন, বিনিময়ে নিয়েছিলেন বাংলার মানুষ এর ভালবাসা। মুক্তিকামী সংগ্রামী জনতাকে তাঁতিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ মানুষ এর কাছে যাওয়ার সহজ মন্ত্রটা এই মানুষটির চেয়ে আর কার বেশি ভাল জানা ছিল? তিনি জানতেন, এক বঙ্গবন্ধুর জন্য লক্ষ বাঙ্গালী জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তত। তাই তো তিনি বলতেন, ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।’

তার শক্তি আর দুর্বলতাকে একাকার করে ফেলেছিল এই বাংলার মানুষ, সেই ভালবাসার কথাই বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমার দেশের মানুষকে ভালবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব বেশি ভালবাসি।’

ক্ষমতার লোভ, পদমর্যাদার মত ক্ষুদ্র বিষয় যাকে ছুঁয়ে যায়নি, যার একমাত্র সুখ ছিল মেহনতি জনগণ এর ভালোবাসার ঘাম বুকে জড়ানোতে তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন এভাবে, ‘প্রধানমন্ত্রী হবার কোন ইচ্ছা আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী আসে এবং যায়। কিন্তু, যে ভালোবাসা ও সম্মান দেশবাসী আমাকে দিয়েছেন, তা আমি সারাজীবন মনে রাখবো।’

তিনি বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙ্গালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারব না।’

এমবি//