ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মাস্ক না পরায় চাকুরিজীবীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো পুলিশ

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২০ শনিবার

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরিকুল ইসলাম

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরিকুল ইসলাম

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক না পরায় পুলিশ এবার এক চাকুরিজীবীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ মার্চ সকাল ৯টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি শনিবার (২৮ মার্চ) জানাজানি হয়। 

এ ঘটনায় ভূক্তভোগী তরিকুল ইসলামকে (৩৫) নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তরিকুল শেখহাটি গ্রামের অলিয়ার রহমান সরদারের ছেলে।

ভূক্তভোগী তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকার উত্তরায় একটি কোম্পানির রিজিওন্যাল ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসেন তিনি। পরেরদিন (২৬ মার্চ) সকালে বাড়ির পাশে শেখহাটি বাজারে বের হন। তবে তরিকুল মাস্ক নিতে ভুলে যান। এ সময় সাদা পোশাকে শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনামুল হক ভূক্তভোগী তরিকুলের কাছে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চেয়ে বলেন, তুই করোনা ভাইরাস ছড়াতে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিস। এমন কথা বলেই এসআই এনামুল তরিকুলকে ধাক্কা দিয়ে বাজারে বরই বিক্রেতার ঝুঁড়ির ওপর ফেলে দেয়। 

এসময় তরিকুল পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান, তিনি বাড়ি থেকে মাস্ক নিতে ভুলে গেছেন। তবুও তরিকুলকে জেরা করেন এসআই এনামুল। এক পর্যায়ে এনামুলসহ তার সাথে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরা তরিকুলকে টেনে-হিঁচড়ে, কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। পুলিশের মারপিটে তরিকুল হাত, পা, মুখ, মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

এ দৃশ্য দেখে বাজারের লোকজন এগিয়ে আসলেও তরিকুলকে পুলিশ সদস্যরা মারধর করতে থাকেন। পরে তাকে শেখহাটি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং টাকার বিনিময়ে তরিকুলকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন এসআই এনামুল। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ঘটনার দিন (২৬ মার্চ) দুপুরে তরিকুলকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নসিমনে করে সদর থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে আহত তরিকুলের ছোট ভাই রায়হান বলেন, সদর থানায় আসার পর ওসি সাহেব বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন এবং ভাইকে ছেড়ে দেন। এরপর ভাইকে নিয়ে সদর হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসা সেবা নিতে বাঁধা দেন শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলমগীরসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। এক পর্যায়ে তরিকুলকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ঘটনার দিন (২৬ মার্চ) রাত ৮টার দিকে তরিকুলকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে শেখহাটি বাজার কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, ছয় থেকে সাতজন পুলিশ তরিকুলকে প্রায় একঘণ্টা ধরে মারধর করেছে। বাজার কমিটির লোকজন পুলিশকে অনুরোধ করলেও কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে অভিযুক্ত শেখহাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এনামুল হক বলেন, তরিকুলের মাস্ক পরা ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তবে তরিকুলকে মারধর করে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তা এনামুল। তরিকুলকে চিকিৎসা দিতেও বাঁধা দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জেনেছি। বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। 

এনএস/