ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার পেরিয়েছে 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ২৯ মার্চ ২০২০ রবিবার

বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সারি। বিশ্বের দুইশতকেরও বেশি দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা।

ভাইরাসিটতে বর্তমানে ভুগছেন বিশ্বের ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪০ মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণ গেছে ৩০ হাজার ৮৭৯ জনের। একইসঙ্গে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৩। 

করোনার ভয়াবহতা রুখতে হিমশিম খাচ্ছে উন্নত থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশসমূহ। বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে প্রাণ হারিয়েছেন  ৩ হাজার ৫২০ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। 

অপরদিকে, প্রতি মিনিটে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। গত বিশ্বজুড়ে একদিনে সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্ত ও প্রাণহারাদের অধিকাংশই ইউরোপীয় ও আমেরিকান নাগরিক। 

চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। গত শুক্রবার দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এতে করে চীন ও ইতালিকেও অতিক্রম করে ট্রাম্পের দেশ। বর্তমানে সেখানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ।

অপরদিকে, কার্যকরি কোনো প্রতিষেধক না থাকায় দীর্ঘ হয়েই চলেছে লাশের সারি। গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে প্রাণহানির সংখ্যা ২ হাজার ২২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। আগামী ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে প্রাণ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন গবেষকরা।

উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলোয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ ট্রিলিয়ন ডলারের করোনা ভাইরাস রিলিফ বিলে স্বাক্ষর করেছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই মূলত এ বিল পাশ করা হয়েছে। 

এদিকে, একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড নিয়ে প্রাণহানির তালিকায় সবার শীর্ষে ইউরোপের দেশ ইতালি। সেখানে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রাণ হারান ৮৮৯ জন। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ২৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯২ হাজার।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির ন্যায় ভয়াবহ সময় পার করছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে  করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮২ জনে, আক্রান্ত ৭৩ হাজারেরও বেশি। গত বৃহস্পতিবার স্পেনে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। লকডাউন চলছে ইতালিতেও। তবুও লাশের লাইন ছোট হচ্ছে না। লকডাউন চলছে ফ্রান্সেও। গত একদিনে সেখানে ৩১৯ জনের মৃত্যুর পর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩১৪ জনে। 

ভয়াবহ অবস্থায় ইউরোপের আরেক কেন্দ্রবিন্দু যুক্তরাজ্যও। সেখানে জারি করা হয়েছে লকডাউন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দ্বিতীয় এলিজাবেথও করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাননি। 

এতে করে থমকে গেছে গোটা ব্রিটেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ৮ বাংলাদেশিও রয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। 

ব্যাপকভাবে বিস্তার ছড়ানো দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে জার্মানির নামও। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫৭ হাজারেরও বেশি। তবে আক্রান্ত অর্ধলক্ষের বেশি হলেও মৃত্যু হয়েছে ৪৩৩ জনের—যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

এদিকে ইরানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় নাম উঠেছে ২ হাজার ৫১৭ জনের। আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার। 

এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নেদারল্যান্ডসে ৬৩৯, বেলজিয়ামে ৩৫৩, সুইজারল্যান্ডে ২৬৪, সুইডেনে ১০৫, পর্তুগালে ১০০, অস্ট্রিয়ায় ৬৮, ডেনমার্কে ৬৫ এবং আয়ারল্যান্ডে ৩৬, রোমানিয়ায় ৩৭ এবং গ্রিসে ৩২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা।

কানাডায় মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের এবং ব্রাজিলে সেই সংখ্যাটা ১১৪। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রকোপ শুরু হলেও দেশটি তা নিয়ন্ত্রণ করেছে ভালোভাবেই। তবে সেখানেও ১৫২ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ১০২ এবং জাপানে ৫২ জন করোনায় মারা গেছেন।

ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২৪ জনে। দেশটি এখন ২১ দিনের লকডাউনে আছে। এছাড়া পাকিস্তানে আক্রান্তের প্রায় দেড় হাজার। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। ফিলিপাইনে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ জন; আক্রান্ত হাজারেরও বেশি।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সংখ্যা ৪৮ জনে, যার মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীন থেকে আনা হয়েছে কিট। যা ইতিমধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।  

এআই/