ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনাতঙ্কের শিকার অসহায় এক বাবা

নাজমুস সালেহী

প্রকাশিত : ১১:৪৮ এএম, ২৯ মার্চ ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১১:৪৮ এএম, ২৯ মার্চ ২০২০ রবিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

গতকাল রাত ১১ টার দিকে, অপরিচিত এক ফোন নাম্বার ভেসে উঠলো মোবাইলের স্ক্রিনে। খুব অসহায় অচেনা এক এক ভদ্র মহিলার কাতর কণ্ঠস্বর। জানালেন, তার বাবা যার বয়স ৬৫ বছর। তিনি কদমতলীর এক বাসায় ভাড়া থাকেন, গত কয়েকদিন আগে তার বাবা জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেন, ডাক্তার সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান এটা স্বাভাবিক জ্বর। 

এরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলতে থাকে। ইতোমধ্যে তার জ্বরের খবর পৌঁছে যায় বাসার সব ফ্লাটে। জেনে যান, বাসার মালিকও। এরপর থেকে বাকি ভাড়াটিয়ারা জ্বরাক্রান্ত ওই বৃদ্ধ করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ভয়ে বাসার মালিককে উনাদের বাসা থেকে বের করে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। বাড়ির মালিক তাদের বাসা থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন। এ সময় অসহায় হয়ে পড়ে ফ্যামিলিটি। 

ভাড়াটিয়াসহ বাড়ির মালিককে প্রেস্ক্রিপশন দেখালেও বিশ্বাস করতে চাননা তারা। অন্য ভাড়াটিয়ারা এবার বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিলে বাড়ির মালিক জোর পদক্ষেপ নেন। জ্বরাক্রান্ত মানুষটি হতাশ হয়ে পড়েন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অন্য সদস্যরাও। এবার জ্বরাক্রান্ত ব্যক্তিটি শরনাপন্ন হন আইইডিসিআরের, সেখানে স্যাম্পল দেয়ার পর পরীক্ষা নিরিক্ষার রেজাল্ট আসে উনি করোনা আক্রান্ত নন। এবার পরিবারটি হাফ ছেড়ে বাচলেও তাদের বাসা ছাড়া করতে একজোট বাকি বাসিন্দারা। 

ঘটনা এবার গড়ায় ওখানকার সোসাইটি সভাপতি পর্যন্ত, তিনিও বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন ওই ফ্যামিলিকে। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বাকি ভাড়াটিয়ারা উনাদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। গতকাল শনিবার সন্ধায় লোকটি তার ছেলেকে সাথে নিয়ে আবারও আগের ওই ডাক্তারের কাছে যান, মেডিসিন কিনে বাসায় ফিরতে রাত ৮ টা বেজে যায়। বাসায় ফিরে দেখেন, গেটে তালা মারা, দারোয়ান তাদের বাসায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। অনেক কথাকাটির একপর্যায়ে বেরিয়ে আসেন বাসার মালিকসহ অন্য ভাড়াটিয়ারাও সাথে সোসাইটি সভাপতিও। উনারা সাফ জানিয়ে দেন উনাদের আর বাসায় ঢুকতে দেয়া হবে না। 

অসুস্থ লোকটি এ সময় আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন, বাবার এমন অবস্থা দেখে ছেলেও ভেঙে পড়েন। উপায় না দেখে তিনি বাসায় ঢুকতে স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে ফোন করেন। সব কিছু শুনে পুলিশও সেখানে যেতে ভয় পায়। একদিনে বাসায় ঢুকতে না পারা, অন্যদিকে পুলিশের করোনা আতংকে নীরব ভূমিকা দেখে অসহায় হয়ে পড়ে ফ্যামিলিটি। এভাবে তিন চার ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন তারা, সেই পুলিশ কর্তার সহায়তায় রাতে অনেক কষ্টে বাসায় ঢুকানো হয় সেই বৃদ্ধ অসুস্থ লোকটিকে। 

পরিবারটি এখনও আতংকে আছে, আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই বৃদ্ধ মানুষটি। গণমাধ্যমের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতেও ভয় পাচ্ছেন ফ্যামিলিটি যদি বাসার মালিক এতে ক্ষেপে গিয়ে চড়াও হন তাদের উপর....।

লেখক: সাংবাদিক