করোনাকে ঠেকিয়েছে ভুটান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩৫ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২০ রবিবার
ভুটানের একটি হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের রোগীদের জন্য ইউনিট। ছবি: দ্যা ইকোনমিক ইউনিট
বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের তালিকা। বিশ্বের ২০১টি দেশে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। আজ রোববার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪০ মানুষ। মারা গেছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। তবে বেশ কয়েকটি দেশ ঠেকিয়ে দিয়েছে এর আক্রমনকে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্ত দেশ ভুটান। করোনাও সেখানে একদম শান্ত। দেশের মধ্যে করোনা কে বহন করে এনেছেন, তাদের কাছে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে ওঠে, এ সংকট কীভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে।
চীনে প্রথমবারের মতো সংক্রমণ শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিবেশী ভুটানে পৌঁছতে ভাইরাসটির সময় লেগেছে দুই মাসেরও বেশি। গত ৬ মার্চ সকালে দেশটিতে ৭৯ বছর বয়সী এক মার্কিন পর্যটকের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই বেশ সতর্ক হয় ভুটান। এ পর্যন্ত আক্রান্ত তিনজনকেই ১৬ জন বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুজনই বিদেশী। স্থানীয় নাগরিক একজন। সংক্রমণ পরীক্ষা করিয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টিনে আছেন চার শতাধিক। দেশটির চিকিৎসক ও নার্সসহ চিকিৎসাকর্মীরাও আক্রান্ত রোগীদের আশপাশে থেকে নিয়মিত সেবা দিয়েছেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে কুণ্ঠাবোধ করেননি তারা।
দেশটির গণমাধ্যমকর্মীরা করোনা প্রতিরোধে নির্ধারিত সাধারণ নিয়মাবলির ওপর জোর দিয়েছেন। তারা ভুটানের রাজার পুরাতন একটি ভাষণ বারবার উল্লেখ করে জনগনকে সচেতন করে তুলেছেন। সরকার ও গণমাধ্যম স্বীকার করে জনগনকে সতর্ক করে যে, সামনে খারাপ দিন আসতে চলেছে। একই সঙ্গে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোও আতঙ্ক ও গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনগনকে সতর্ক করে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নয়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
ভুটান এখন পর্যটন শূন্য- সংগৃহীত
ভুটানের বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ এ সংকটের সময়ে এগিয়ে এসে হোটেলগুলোকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেয়। অন্যদিকে তাদের এ উদ্যোগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বিদ্যুৎ বিল ও মোবাইল ডাটা ফ্রি করে দিয়েছে ভুটান পাওয়ার করপোরেট (বিপিসি) ও ভুটান টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল)। হোটেলগুলো যতদিন কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে ততদিন এ সুবিধা চালু থাকবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতিবেশী ভারতের রাজ্যগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া। সৌভাগ্যবশত এসব রাজ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভালোভাবে দেখা দেয়ার আগেই ভুটান সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তবে দেশটির নাগরিকরা আগেই সীমান্ত বন্ধের দাবি করেছিলেন। কিন্তু ভুটান পর্যটনশিল্প নির্ভর হওয়া তা হুট করেই সম্ভব হয়নি। তবে ভুটানের কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। যেসব নাগরিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন তাদের কোয়ারাইন্টাইন নিশ্চিত করেছিল।
সরকারের নেতৃত্বগুণ এবং জনগনের শৃঙ্খলাবোধের কারণে করোনার প্রকোপ ঠেকানো গেছে বলে মনে করেন দেশটির বিশিষ্টজনেরা। দেশটির রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক করোনা মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে তাকে অনেক বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়েছে। সরকার ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে তদারকি চালিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি। করোনা মোকাবেলায় দেশটিতে জনগণের চলাচল সীমিত করে আনা হয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সার্বিক পরিস্থিতি।
এমএস/