ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনায় মানসিক চাপে পড়ছে শিশুরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ৩০ মার্চ ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার

ঘরের ভিতরেই শিশুদের হাসিখুশি রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা- একুশে টেলিভিশন

ঘরের ভিতরেই শিশুদের হাসিখুশি রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা- একুশে টেলিভিশন

শিশু মন মানতে চায় না কোন বাধা। মানতে চায় না কোন সীমাবদ্ধতা। নিজের মতো করে চলতে চায় ওরা। তবে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে বাংলাদেশেও সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছন। নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গ নিরোধে থাকার ফলে স্বেচ্ছা ঘরবন্দি হয়েছেন মানুষ। স্কুলে যেতে পারছে না, ঘরের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে বা বেড়াতেও যেতে পারছে না শিশুরা। তার উপরে করোনার আতঙ্ক শিশু মনে ভয় হয়ে বাড়ছে মানসিক চাপ। শিশু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুমনে করোনার বিষয়ে যেন আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি না হয় এ জন্য অভিভাবকদের আরও যত্নশীল হতে হবে। ঘরের ভিতরেই শিশুদের হাসিখুশি রাখতে খেলাধুলা ও বিনোদনের আয়োজন করতে হবে।  

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলে জনসমাগম এড়াতে ১৮ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে সরকার। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে তা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করা হয়েছে জনসমাগম, বিনোদন, পর্যটন, মার্কেটসহ সব কিছু। বড়দের সঙ্গে শিশুরাও স্বেচ্ছা গৃহবন্দিতে হয়েছে। এতে শিশুদের মনজগতেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। শিশুদের মনকে যেন ভয় ঘিরে ধরতে না পারে সে দিকটাই বেশি খেয়াল রাখতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অন্যান্য সময় শিশুদের সঙ্গে সয়ম কাটানোর জন্য অভিভাবকরা তেমন একটা সুযোগ পান না। এখন শিশুদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত হতে পারে আনন্দঘন। 

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ‘এ সময় বাচ্চার সঙ্গে গল্প করুন। তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। বাচ্চার কথা শুনুন। তার প্রতি আপনি আগ্রহ দেখান। সে যে বিষয়গুলো পছন্দ করে যেমন তার স্কুল, বন্ধু বা যা পড়তে তার ভালো লাগে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তার কথাকে আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনুন।’ ঘরকে শিশুর জন্য আনন্দময় করে তুলতে হবে এবং তাকে তার বাবা-মা এবং পরিবার থেকে কোনভাবেই আলাদা করা যাবে না জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অযথা বাচ্চাকে বকাঝকা করবেন না। কারন আপনার অতিরিক্ত বকাঝকা শিশুকে মানসিকভাবে দুর্বল অথবা তার দুষ্টমি বেড়ে যেতে পারে। এতে করে এই কঠিন সময় আরও দুর্বিষহ হতে পারে। এ সময় আমরা যতটা পারি শিশুদের ইনডোর গেইম খেলতে পারি। অন্যান্য সময় শিশুরা স্কুল এবং বাসায় যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। স্কুল, পড়াশুনা এবং ঘুমের মধ্যেই তাদের দিন পার করতে হয়। ব্যস্ততার কারনে মা-বাবাকে কাছে পায় না। এ সময়টায় বাবা-মা তার শিশুকে বাড়তি পাচ্ছেন বলে সময়টাকে আনন্দঘন করার দায়িত্ব তাদরে।’

শিশুদের ভালোলাগার কাজে এ সময় উৎসাহ দিতে হবে- একুশে টেলিভিশন

করোনা ভাইরাসে কারনে পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তা শিশুকে বুঝিয়ে বলতে হবে। পরিবারের কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হলে শিশুকে তা আগে থেকে জানাতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে আতঙ্কের কিছু নেই বলে উল্লেখ করেন এ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।  

এদিকে করোনা ভাইরাসে শিশুদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে অভিভাবকদের বিচলিত হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কম। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল বলছে, ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। মাত্র ১০ শতাংশ রোগী ৩৯ বছরের কম বয়সী। শিশুদের আক্রান্ত না হওয়ার বিভিন্ন তত্ত্ব থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞরা।

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষভাবে কাজ করে- একুশে টেলিভিশন

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের ভাইরাস সম্পর্কিত বিজ্ঞান বা ভাইরোলজির অধ্যাপক ইয়ান জোনস বলেন, ‘কারণ আসলে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, হয় শিশুরা সংক্রমণ এড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো তারা মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হচ্ছে না। পাঁচ বছরের বেশি বয়সী এবং কিশোরদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষভাবে কাজ করে।’ শিশুরা রোগটিতে খুব মৃদুভাবে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের নিয়ে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে তেমন একটা যেতে হচ্ছে না। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনা ভাইরাস উদ্ভূত হয়। এরপর বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার (২০ মার্চ, ২০২০) পর্যন্ত বিশ্বের ২০২টি দেশে এ প্রাণঘাতি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ২২ হাজার জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৭৬ জন। 

এমএস/