করোনা বিশ্বে ‘আপনি’ কি করবেন?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৩:১৩ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২০ সোমবার
বিশ্বজুড়ে থামছেই না করোনার দাপট। যেখানে প্রতিনিয়ত সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এ ভাইরাসের কোন প্রতিশোষক নেই। প্রতিকারই এক মাত্র উপায়। এ প্রতিকারটি হলো, সচেতনতা। সচেতন হলে এ ভাইরাসকে অনেকার্থেই ঠেকিয়ে রাখা যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৩৪৮ জন। আর প্রাণহানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। এতে করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৭ লাখ ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৬ জনে। একইসঙ্গে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৬ জন। আক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র ও মৃতের সংখ্যায় ইতালি সবার শীর্ষে।
বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর গত তিন দিনেই সেখানে আরও ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে বর্তমানে সংক্রমিতের সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার কবলে পড়েছেন ১৮ হাজার ৩২০ জন।
অপরদিকে, কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক না থাকায় বেড়েই চলেছে লাশের সারি। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৫৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে করে ট্রাম্পের দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪৮৪ জন। আগামী ৪ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে প্রাণ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন গবেষকরা।
একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড নিয়ে প্রাণহানির তালিকায় সবার শীর্ষে ইউরোপের দেশ ইতালি। সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৯। এর মধ্যে গত একদিনে মারা গেছেন ৭৫৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৯৭ হাজার ৬৮৯ জন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির ন্যায় ভয়াবহ সময় পার করছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮০৩ জনে, যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮২১ জনের। আক্রান্ত ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অসুস্থরা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে চিকিৎসকরা জানান। করোনা ভাইরাসের আক্রমন ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে মানুষজনও হোম কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গ নিরোধে থাকছেন।
কোয়ারেন্টাইনের কী করবেন:
‘যার হাতে কিছুই নেই, তার হাতেও সময় আছে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ’ এমনটিই বলেছিলেন স্প্যানিশ লেখক ও দার্শনিক ব্যালটাজার গার্সিয়ান। তার এ উক্তিতে এখন মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে চলছে সরকারি ছুটি। অঘোষিত লকডাউনে রাজধানীবাসী কার্যত গৃহবন্দি। ঝুঁকি এড়াতে উপর তলা-নিচ তলার অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে।
এখন আপনি হোম কোয়ারেন্টাইনের সময় অপচয় করবেন, ঘরে বিরক্তিকর জীবন কাটাবেন নাকি সময়কে কাজে লাগিয়ে উপভোগ করবেন বিষয়টি আপনার উপরে নির্ভর করে। এ লকডাউন কর্মব্যস্ত সব শ্রেণির মানুষের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ এনে দিয়েছে। আপনি কিভাবে সময় ব্যয় করবেন সেটাই কথা।
রাজধানীর মানুষ কর্মজীবী। চাকরি, ব্যবসা এবং নানান পেশাগত কারণে যারা সন্তানদের সময় দিতে পারেন না, তারা এখন সন্তানদের কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন। নিজে বই পড়তে ও লিখতে পারেন। সামষ্টিকভাবে বাসায় থাকার নির্দেশনা থাকলে সময়টাকে আপনি চমৎকারভাবে কাজে লাগাতে পারেন।
ভোরে ঘুম ভাঙলেই বলুন শোকর আলহামদুলিল্লাহ বা হরি ওম বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। মুসলমানরা নামাজের পর ৪০ বার দোয়া ইউনুস ও বেশ কয়েকবার দরুদ পড়ুন। সনাতনধর্মীরা ৪০ বার গায়ত্রী মন্ত্র, বৌদ্ধরা বুদ্ধমন্ত্র ও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মানুসারে যে কোনো প্রার্থনা করতে পারেন। এরপর কিছুক্ষণ পবিত্র আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পাঠ করুন।
দিনের শুরু, নাশতা ও অন্যান্য দিয়ে দিনটি শুরু করুন মানুষের কল্যাণে কিছু দানের মাধ্যমে। হালকা কিছু খেয়ে (কাঁচা ছোলা অথবা দুই/তিনটা খেজুর) দমর্চচা ও কোয়ান্টাম ইয়োগা করুন। অন্যদের অসুবিধা সৃষ্টি না করে ঘরের মধ্যেই হাঁটুন বা দৌড়ান। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করুন। নাস্তায় এক কোষ কাঁচা রসুন ও ২৫/৩০টি কালোজিরার দানা খান। সুযোগ থাকলে একগ্লাস লেবুপানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
পরিবারের সদস্যদের কোয়ালিটি সময় দিন। শিশুদের সাথে খেলাধুলা, গঠনমূলক আলোচনা, শিক্ষামূলক গল্প কবিতা গান ইত্যাদির ভেতর দিয়ে একাত্ম হোন। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করুন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে মনোযোগী সময় দিন। অতীতের নেতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ বর্জন করুন। পরিবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা (মনছবি) নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করুন। বাবা-মাসহ বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সুখ-দুঃখের কথা শুনুন। নিজের পরিবারের বাইরেও আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর রাখুন নিয়মিত। পরিবারে বই পড়া ও বই নিয়ে পর্যালোচনা করার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারেন। এক্ষেত্রে শুদ্ধাচার বইটি সবাই মিলে পড়া অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কর্মজীবী যারা হোম-অফিস করছেন তারা আন্তরিকতার সাথে অফিসের কাজটুকু করুন। অন্যরা সুযোগ থাকলে পারিবারিক কাজ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিন। আপনার এই ছোট্ট সহযোগিতা পারিবারিক একাত্মতা আরো বাড়িয়ে দেবে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখা অব্যাহত রাখুন।
কী খাবেন:
খাবারের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে ফলমূল, শাক সবজি বেশি খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। -চর্বিদার ও গুরুপাক খাবার যত কম খান তত ভালো। -প্রতিবেলায় খাবার পরিবারের সবাই একসাথে গ্রহণ করুন। দিনভর টিভি, ইন্টারনেট, সামজিক মাধ্যমের সংস্পর্শে থাকা এড়িয়ে চলুন। সারাদিনে দুই থেকে তিনবার শুধু সুনির্দিষ্ট সময়েই এগুলো দেখুন বা ব্যবহার করুন। গুজবে কান না দেয়া, আতঙ্কিত না হয়ে বরং অন্যদের মাঝে সাহস সঞ্চার করুন। বালা মুসিবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য গীবত, পরচর্চা, দুর্ব্যবহার, নেতিবাচক আলোচনা, নেতিবাচক ছবি, সংবাদ বা ভিডিও দেখা ও শেয়ার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। অধীনস্থকে ছুটি দিলে অগ্রিম বেতন দিয়ে দিন। আপনার সাথে সম্পর্কিত অধীনস্থদের (গৃহকর্মী, ড্রাইভার, মালী প্রমুখ) প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রাখুন। তাদের দুঃসময়ে যথাসম্ভব সহযোগিতা করুন। ছুটি দিলে অন্তত এক মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে দিন। পরিবার বা আত্মীয়দের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে ঘৃণা করবেন না বা তাদের দূরে ঠেলে দেবেন না। স্বার্থপরের মতো দায়িত্বে অবহেলা করবেন না। যথাযথ চিকিৎসার উদ্যোগ নিন।
চীন তার শেষ করোনা-হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ আলাদা হাসপাতাল চালাবার মতো পর্যাপ্ত রোগী আর সেখানে নেই। এক সপ্তাহে উহানে আর কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। বলা হয়, করোনাভাইরাসের ঘাতক প্রভাব নাকি বয়স্কদের ওপর বেশি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বয়স্ক অনেকেরই খবর পাওয়া যাচ্ছে, যারা করোনাক্রান্ত হওয়ার পরও সেরে উঠেছেন। তাদেরই একজন ছিলেন চীনের সবচেয়ে বর্ষীয়ান করোনারোগী উহানের ১০৩ বছর বয়সী এক নারী। জ্বর এবং হার্টের সমস্যা নিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে লিশানশান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এ নারী। কিন্তু ১ মার্চ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি।
এমএস/