একজন মানবিক আলোকচিত্র সাংবাদিক বন্ধুর বিদায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:২১ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার
আব্দুল হাই স্বপন
দীর্ঘদিন পর কোমা থেকে ফিরলেও করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে মুক্তি পেলেন না খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক ও আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের কার্যকরি সদস্য আব্দুল হাই স্বপন। সোমবার (৩০ মার্চ) নিউ ইয়র্ক সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে কুইন্স হাসপাতালে মারা যান সবার পরিচিত ‘স্বপ্ন হাই’।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। ভারতে তার কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল।
নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে স্বপন হাইয়ের জন্য একটি ফান্ডরেজিং কনসার্ট করা হয় গত ৬ মার্চ। যেখানে সাংবাদিক ও কমিউনিটির অনেক বন্ধুরা সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। গত ২৮ মার্চ তাঁর দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে তিনি কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তার করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন স্বপন হাই।
স্বপন হাই দেশের বাংলাবাজার, মানবজমিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। গত বছর থেকে দেখা দেয় কিডনি জটিলতা। তখন থেকেই নিয়মিত ডায়ালাইসিসে ছিলেন।
খ্যাতিমান এই সাংবাদিক নিউ ইয়র্কের প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা, সাপ্তাহিক আজকাল ও টিবিএন২৪ টেলিভিশনে কাজ করেছেন। তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী ঢাকার একটি স্কুলে চাকরি করেন।
আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর তার দেশে ফেরাসহ সার্বিক বিষয়ে তত্ত্বাবধান করছিলেন। নিউ ইয়র্কে স্বপন তার বড় ভাই মতিনের জ্যামাইকার বাসায় থাকতেন। স্বপন হাইয়ের মৃত্যুতে নিউ ইয়র্কে শোকের পরিবেশ আরো শোকাবহ হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সোসাইটির তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে স্বপন হাইকে নিউজার্সির বাংলাদেশ সোসাইটির নিজস্ব কবস্থানে দাফন করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন সোসাইটির সহসভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার। স্বপন হাইয়ের মৃত্যুতে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন ও কমিউনিটির নেতারা শোক জানিয়েছেন।
প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক আককাস মাহমুদ তার ফেসবুকে লিখেছেন-
ফটো সাংবাদিক আককাস মাহমুদ
একজন মানবিক আলোকচিত্র সাংবাদিক বন্ধুর বিদায়....
২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাতীসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউ ইয়র্কে যেয়ে এক সকালে পুরনো বন্ধু স্বপন ভাইকে ফোন দিয়ে বললাম ভাই দেখা করতে চাই! আমার কন্ঠ শুনেই খুশি হয়ে স্বপন ভাই জ্যাকসন হাইটে ‘আজকাল’ পত্রিকার লোকেশন বুঝিয়ে দিয়ে বললেন প্লিজ আককাস ভাই চলে আসেন অফিসে! বন্ধু মইনুলকে সাথে করে চলে গেলাম আজকাল অফিসে!
দেখি স্বপন ভাই একজন গ্রাহকের সাথে কথা বলছেন এবং বিজ্ঞাপনের মানি রিসিট কেটে ডলার বুঝে নিচ্ছেন।
গ্রাহক চলে যাবার পর আমি বললাম আপনিতো আজকালের ফটোসাংবাদিক! আপনিতো দেখছি বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের কাজও করছেন!
স্বপন ভাই আমাকে বুকে জড়িয়ে বললেন আককাস ভাই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সব কাজ করা যায়!
আমি বললাম হেল্প লাগবে ভাই! আমি নিউ ইয়র্কে আমার তোলা বিয়ের ছবি নিয়ে ফটোএক্সজিবিশন করবো, সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ আপনি আমাকে লোকাল মিডিয়ায় একটু কাভারেজের ব্যবস্থা করে দেন ভাই। নিজেই প্রেস রিলিজ লেখলেন, জেরোক্স কপি করলেন, চলেন ভাই বলেই আমাদের নিয়ে বের হলেন স্বপন ভাই।
অচেনা শহরের এই গলি ওই গলি ঘুরেঘুরে একাদিক পত্রিকা অফিসে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন যে আমার বিশেষ বন্ধু, ফটোএক্সজিবিশন করবে এই প্রেসরিলিজ ব্যাপক কাভারেজ দিতে হবে ভাই!
এখানেই শেষ না! এক্সজিবিশেনর পরে কোন পত্রিকা কি কাভারেজ দিয়েছে সে পত্রিকা জোগাড় করে পেপারকাটিং আমার ইনবক্সে যত্নকরে পাঠিয়েছেন প্রিয় স্বপন ভাই!
এই ভালোবাসার ঋন কেমনে ভুলি! গতরাতে যখন তার পৃথিবীর মায়াত্যাগ করার খবর দেখছিলাম চোখটা আমার ভেসে যাচ্ছিল ভালোবাসার নোনাজলে।
কয়েকদিন আগে ‘কোমা’ থেকে ফেরত আসলেন স্বপন ভাই। কিন্তু অচেনা শত্রু করোনা ভাইরাসের নিকট পরাজিত হলেন এই মেধাবী সিনিয়র ফটোসাংবাদিক।
নিউইয়র্ক প্রবাসী বন্ধু নিহার ভাই বলছিলেন গত পরশু নাকি স্বপন ভাইয়ের দেশে ফেরার কথা ছিলো! মহান সৃস্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা, এই মানবদরদী স্বপন হাই ভাইকে জান্নাত দান করুন।
এনএস/