ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনায় মানসিক চাপ সামলাতে করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল

সম্প্রতি করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী এক মহামারীর রুপ নিয়েছে। প্রকৃতির আইনের কাছে ক্রমাগত অসহায় হয়ে পড়ছে মানুষ। মানুষের মাঝে দানা বাঁধছে নিশ্চয়তা-অনিশ্চয়তার জাল। অনেকে আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেখতে না পেয়ে। 

করোনা ভাইরাসে মানসিক চাপ সামলাতে করণীয় সম্পর্কে একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল। তথ্য সংগ্রহে ছিলেন মুছা মল্লিক। 

ভয়াবহ এই মহামারী নিয়ে মানসিক চাপ আসবেই। তবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রথমে দরকার চাপমুক্ত থাকার ইচ্ছা। চাপ উদ্রেগকারী অবস্থাকে শান্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে৷ তাছাড়া চাপমুক্ত থাকতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন - 

মনে রাখতে হবে- 
১. করোনা আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়।
২.কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশন মানে নিজের সুরক্ষা করা।
৩.নিজেকে রক্ষা করা মানে পরিবারকেও নিরাপদ রাখা। সমাজ ও দেশ করোনামুক্ত করার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা।
৪. এই মুহূর্তে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম হলো ঘরে থাকা। দেশকে ভালোবাসা।

এই মুহূর্তে যা কিছু করা প্রয়োজন-
১. ঘরে ঘরে গান শুনি, বই পড়ি, লেখালেখি করি অথবা আনন্দময় বা সৃষ্টিশীল কাজে মগ্ন হই।
২.এ সুযোগে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করি।
৩.যার যার ধর্মীয় চর্চা করি।
৪. শিশুদের মনের কথা শুনি। তাদের মতামত নেই। করোনা নিয়ে তাদের মনোভাব বুঝি তাদের বয়সের স্তরে নেমে। তাদের সঙ্গে সাপলুডু খেলি। বা তাদের ইচ্ছায় খেলা যায় এমন কোনো গেমসও খেলতে পারি।
৫. বয়স্কদের পুরোনো রোগশোকের যত্ন নেই।
৬. সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরে এক্সারসাইজ করি। মেডিটেশনও।
৭.ডায়েরি লিখতে পারি প্রতিদিন, কী বলুন? বর্তমান সময়টুকু ধরে রাখার একটা বড়ো মাধ্যম ডায়েরি লেখা।

তাহলে করোনাকে কি ভয় করার প্রয়োজন নেই?

১.আছে। আসল বাঘ ( করোনা) আমদের বাড়ি আক্রমণ করতে আসছে। এ সময় মাঝারি ধরনের ভয় থাকা জরুরি। এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত ভয়, সমস্যা মোকাবিলা করতে আমাদের উদ্যোগী করবে।
২. তবে অতি আতংকিত হওয়া বা একদম ভয় না-পাওয়া বা অসচেতন হওয়া হবে বিপজ্জনক।
৩. অতি আতংকিত হলে নিতে হবে মনোচিকিৎসা সেবা।

এছাড়া ও

• আস্থা রাখুন নির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর- ভূয়া তথ্য আপনাকে মানসিকভাবে বিকৃত করে দিতে পারে, এতে চাপের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই প্রথমেই সচেতন হতে হবে তথ্য এর উৎস সম্পর্কে। তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, আইইডিসিআর, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের ওপর আস্থা রাখুন। 

• বিশ্বাস রাখুন সৃষ্টিকর্তার উপর- পরিস্থিতি যত বৈরী হোক না কেনো নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করুন। সৃষ্টিকর্তায় গভীরভাবে বিশ্বাসী হয়ে উঠুন। অনুভব করতে থাকুন আপনার প্রতিপালক আপনাকে ত্যাগ করেননি। এতে মনে প্রশান্তি আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর বিশ্বাস থেকে মুক্তি মেলে মানসিক যন্ত্রণা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার।

• বাড়িয়ে তুলুন আন্তরিক  সম্পর্ক - চারপাশে আমাদের অনেক প্রিয়জন থাকা সত্ত্বেও ভৌগলিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ সময়ে আপনি ফোন কলে, ক্ষুদেবার্তায়, ইমেইল, ফেসবুকে বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যহত রাখুন। তাদের অভয় দিন। আন্তরিকভাবে তাদের সাথে কথা বলুন।

• এড়িয়ে চলুন গুজব- বিভিন্নভাবে অতি-প্রচারিত ভূল তথ্য হতে সাবধান। মনে রাখতে হবে, ভূয়া তথ্য আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে।

• সব সময় করোনা ভাইরাস নয়, ইতিবাচক চিন্তা করুন- সবসময় করোনা ভাইরাস নিয়ে পড়ে না থেকে শিশুদের সাথে এবং পরিবারের সাথে আনন্দঘন সময় অতিবাহিত করুন। এতে মানসিক অবসাদ দূর হবে। 

• বই পড়ুন নিয়মিত - বই আপনার মস্তিস্কের প্যাটার্ন বদলে দিতে পারে অদ্ভুতভাবে৷ আপনাকে নিয়ে যাবে এক ভিন্ন জগতে। গবেষণা উঠে এসেছে যারা নিয়মিত বই পড়েন তাদের মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার শক্তি প্রবল।
• শিশুদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন- ছোট শিশু বাচ্চাদের কাছে টানুন, ভালবাসা দিন। তাদের সাথে অনূভুতির জগতে শৈশবকে অনুভব করুন। পদ্ধতি সম্পর্কে শিশুদেরকেও মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন চিকিৎসা ।
• যতটুকু সম্ভব মানুষকে সাহায্য করুন, শুধু অর্থ দিয়ে নয়- দিকনির্দেশনা, সঠিক পরামর্শ, সুন্দর আচরণসহ সব ইতিবাচক চিন্তাভাবনা দিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিন। মহান ব্যক্তিরা এভাবেই জীবনকে উপভোগ করতেন।

এমবি//