ইতালির মৃত্যুপুরীতে যেভাবে বেঁচে গেলেন ৫০ হাজার চীনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৩ এএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার
ইতালির প্রাতো শহরে ৫০ হাজার চীনা বসবাস করেন। প্রাতোর জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ জাতিগত চীনা। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে যেখানে ইতালিতে সর্বোচ্চ মৃত্যু, সেখানে মৃত্যু তো দূরে থাক কোনো ছিটে ফোটাও পড়েনি এসব চীনাদের শরীরে।
এর কারণ হিসেবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীনের এসব নাগরিকরা বাঁচার উপায় হিসেবে ঘরে থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন। চীনা এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে ইতালির প্রাতো শহরের ৫০ হাজার চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
প্রাতোর চীনা বংশোদ্ভূত মানুষেরা চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে। এই শিক্ষা হলো, ঘর থেকে বের না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। গত জানুয়ারির শেষ দিকে প্রাতোর চীনা বংশোদ্ভূত লোকজন নিজেরাই লকডাউন করে ঘর থেকে বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এখানকার চীনারা কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
চীনারা অন্যদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার কারণেই করোনা ভাইরাস সেখানে বসবাসকারী অন্যদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও চীনাদের আক্রান্ত করতে পারেনি।
অথচ দুই মাস আগে যখন করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছিল তখন ইতালির প্রাতো শহরের চীনা বংশোদ্ভূত লোকজনের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এর সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সে সময় একে লজ্জাজনক বৈষম্য হিসেবে বর্ণনা করে।
চীনা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো উহু বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ইতালির অনেক ব্যবসায়ীকে তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য অনুরোধ জানালে তাঁরা এমনভাবে তাকিয়েছিলেন যেন মিথ্যা বলছি। কেউ তখন বিশ্বাস করেননি মহামারি এভাবে সংক্রমণ ঘটাবে।
প্রাতো শহরে শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেনজো বার্তি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ইতালীয়রা আশঙ্কা করেছিলাম, প্রাতোর চীনাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অথচ তারা ইতালীয়দের চেয়ে অনেক ভালো করেছে।’ তিনি বলেন, প্রাতোতে বাস করে এমন কোনো চীনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির দেওয়া তথ্যমতে, ইতালিতে সর্বশেষ ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫২ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১২ হাজার ৪২৮ জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোনো ঘটনায় ইতালিতে এত মানুষ মারা যায়নি।
এমবি//