করোনার ‘টার্নিং পয়েন্ট’ এপ্রিল মাস
মঈন বকুল
প্রকাশিত : ১২:২০ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৩২ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার
ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। চীনের উহান থেকে উৎপত্তি এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে। এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। প্রাণহানি ঘটেছে ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষের। কিন্তু কবে থামবে করোনার প্রকোপ! তার কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই কারোর কাছে। বাংলাদেশেও আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ জন। মারা গেছেন ৬ জন।
ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ এই এপ্রিল মাস। পুরো এপ্রিল জুড়ে চলতে পারে মরণঘাতি ভাইরাসটির সংক্রমণ। প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিদেশফেরতদের আসার ওপর নির্ভর করে এ আশঙ্কা করছেন তারা। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের বিস্তার রোধে এপ্রিলে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে গড়ে ৫ দশমিক ৫ দিন। আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক, এরইমধ্যে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতে থাকে আক্রান্ত মানুষটি। অর্থাৎ আক্রান্তের দিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি ভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে পারে।
আমাদের দেশে ১৮ মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এ সময়ের পর আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। এর মধ্যে আক্রান্তদের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারেন আরো অনেকে। এই চক্রটি যদি ভেঙে না দেয়া যায় তাহলে এপ্রিলের মধ্যে দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে কোভিড-১৯।
জানা যায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই বার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই কেবল আক্রান্তরা আইসোলেশন থেকে মুক্তি পেতে পারেন। স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকা কোনো ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। তাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা মানা না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে ঘরে থাকাই হচ্ছে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর মহৌষধ।
বিষয়টি ব্যখ্যা করে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ বলেন, প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। বাংলাদেশে এপ্রিলের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে অনেক বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি। আমরা একটি সীমিত সম্পদের দেশ। তাই অল্প কয়েক হাজার আক্রান্ত রোগীও স্বাস্থ্যসেবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেলতে পারে। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ফল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুবার নেগেটিভ এলেই কেবল আক্রান্তরা বিচ্ছিন্নতা থেকে ছাড়া পেতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকা কোনো ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। তাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা মানা না হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কোনো মহামারীতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সরাসরি কতজন আক্রান্ত হতে পারে তা বেসিক রিপ্রোডাকশন নম্বর বা আর.ও নামে পরিচিত। কভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে এই আর.ও. বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ নতুন ধারার সংক্রামক রোগ সবাইকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলেছে।
জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কভিড-১৯ এর আর.ও ২ দশমিক ৪৯ থেকে ২ দশমিক ৬৩ পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ হলো একজন আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে ২ দশমিক ৫ জনেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। একজন আক্রান্ত ব্যক্তি ১০ জন বা ১০০ জনের মধ্যেও রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারে। তাদের চরম সংক্রামক বলা হয়ে থাকে। চীন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে এরকম চরম সংক্রামক থাকার প্রমাণ মিলেছে। তাই সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে ঘরে থাকাই হচ্ছে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর মহৌষধ।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির মধ্যেই আগামী ৫ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর সঙ্গে ১০ ও ১১ এপ্রিল দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশে টানা ১৭ দিন ছুটি থাকবে।
দেশের এই বিপদে জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে নেমেছে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এই ক্রান্তিকালে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সহযোগিতা করা দরকার। নিজেকে বাঁচাতে, অন্যকে বাঁচাতে, আমাদের আগামীদিনের প্রজন্মকে বাঁচাতে এই ত্যাগটুকু স্বীকার করতেই হবে।
এমবি//