ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

রাস্তায় কড়াকড়ি: ভোগান্তিতে ব্যাংকাররা

রিজাউল করিম

প্রকাশিত : ০৭:৪৯ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৫৫ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস রোধে বাংলাদেশেও বন্ধ রয়েছে অফিস আদালত। সরকার ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনীও। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের সীমিত পরিসরে অফিস করতে হচ্ছে। ফলে পথে পথে তাদেরকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর পরিস্থিতি ও নানা ভোগান্তিতে। রাস্তায় বাধার মুখে পড়ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে এমনই এক বিড়ম্বনার চিত্র দেখা গেছে। অফিস যাওয়ার পথে মোড়টিতে দাঁড়িয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন রাজধানীর পল্টন এলাকায় কর্মরত বেসরকারি একটি ব্যাংকের এক সিনিয়র নারী কর্মকর্তা।

বিতণ্ডার একপর্যায়ে আবেগতাড়িত কণ্ঠে পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেমন জনগণের সেবা করছেন তেমনি আমরাও গ্রাহককে সেবা দিচ্ছি। গ্রাহকদের সুবিধার্থে সীমিত পর্যায়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখার ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপনের কথা আপনারা কি জানেন না? করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি জেনেও তো সন্তানদের রেখে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। আর আপনি বলছেন পল্টন দিয়ে হেঁটে যেতে।

এ সময় মহিলার কান্না শুনে ছুটে আসেন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোকে খোলা রাখতে বলা হয়েছে। আচ্ছা, আপনি অফিস যখন করেন, আমরা দেখি কোনো গাড়িতে আপনাকে পাঠাতে পারি কি-না।’ এ কথা শুনে ওই নারী বলে ওঠেন, ‘হেঁটেই যাব, পারলে ব্যাংক বন্ধ করে দেন।’

জানা যায়, সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পুলিশের সহকারী কমিশনার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্টসহ পুলিশ সদস্যরা রাজপথে চলা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান ও রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছিল। এতে করে চরম বিপাকে পড়েন ব্যাংকার ও চিকিৎসকরা। তারা নিজেদের পরিচয় দিলেও পুলিশ কোনো যানবাহনকেই রাস্তা চলাচল করতে দিচ্ছিল না। এ সময় একাধিক ব্যাংকার ও চিকিৎসককে রিকশা থেকে নামিয়ে হেঁটে যেতে বলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে জরুরি সেবার সাথে জড়িতদেরকেও হেনস্তা করছে। মোহাম্মদপুরের উদ্যান এলাকার বাসিন্দা ওই নারী চিকিৎসক বলেন, তিনি পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) চাকরি করেন। আজ সকালে তিনি রিকশা নিয়ে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান হাউজিং এলাকা থেকে আসার পথে বার বার পুলিশের বাঁধার মুখে পড়েন। অন্যান্য স্থানে পুলিশ আটকালেও পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আর এখানে আসার পর পুলিশ রিকশার চাকার পাম্প ছেড়ে দিয়েছে।

এ সময় তিনি বলেন, এখন কি আমি মিটফোর্ডে হেঁটে গিয়ে অফিস করবো বলেন? এক পর্য়ায়ে পুলিশ ব্যাংকার ও চিকিৎসকদের কর্মস্থলে রিকশা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ-ব্যাংকের-নির্বাহী-পরিচালক-ও-মুখপাত্র-সিরাজুল-ইসলাম বলেন, আমি আজকেও একটা মিটিংয়ে এটেন্ড করতে বাহিরে গিয়েছিলাম। আমার তো কোন পুলিশ আটকালো না। কারণ আমার কাছে আমার ব্যাংকের আইডি কার্ড আছে। তাই এমন পরিস্থিতি এড়াতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিজনিজ কর্মস্থলের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে বলবো।

আর সরকার ঘোষিত করোনা সতর্কতায় যে ছুটি সেটাও আমরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেছি। তাদেরকে দুই ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। আগের মতো পূর্ণ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় চলাচল সীমিত করার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা আছে। তবে যদি কোন পুলিশ সেই নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত কিছু করে তবে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। কিন্তু কোন ব্যাংক কর্মকর্তা ব্যাংকে যেতে চেয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন আমাদের কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব।

তিনি আরও বলেন, সাধারণ জনগনকে করোনার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কোন কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে যেতে হলে পুলিশ জানতে চাইলে তার পরিচয় দিতে হবে। সঙ্গে কর্মস্থলের আইডি কার্ডও রাখতে হবে। তাহলে আমাদেরও দায়িত্ব পালনে সুবিধা হবে। কাউকে বিড়ম্বনার শিকারও হতে হবে না।

অন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশনা পালন করছি। যেহেতু করোনাভাইরাস মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তাই সবাইকে নিয়ম মানতে হবে। রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। ডাক্তার আর সাংবাদিকরা বের হলেও অন্যরা ঘরে থাকবেন। ব্যাংকে যারা অফিস করছেন তাদের অবশ্যই আইডি কার্ড বা প্রয়োজনীয় কাগজ সঙ্গে রাখতে হবে।

আরকে/এসি