ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনা সংকট: বেসরকারী হাসপাতালের এ কেমন আচরণ

মোহাম্মদ ইউছুফ

প্রকাশিত : ১১:৩৬ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে বিপর্যস্থ। সব দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের মৃত্যুর মিছিল। ভয়াবহ এই দুর্যোগে খোড়া যুক্তি দেখিয়ে দেশের বড় বড় সব বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক, ডাক্তার এবং নার্সদের স্বেচ্ছা-অন্তরীণে চলে গেছেন। এ যাওয়া যেমন দুঃখজনক তেমনি লজ্জাজনকও বটে। আমরা বাংলাদেশের জনগণ তাদের এমন আতংক-প্রসূত নিষ্ক্রিয়তায় সত্যিই হতবাক হয়েছি। হাসপাতাল মালিক ও চিকিৎসকদের আচরণ দেখলে মনে হয় তারা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন। মানুষের জীবন বাঁচাতে বা দেশের সংকটে তাদের কোন দায়িত্ব নেই। নিজেদের নিরাপত্তা দেয়াই একমাত্র এবং অন্যতম লক্ষ্য।

কারো প্রতি কোন রকম ক্ষোভ নয় দেশের বড় বড় সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কথাই বলছি। দেশের এই ক্রান্তিকালে এসব নামিদামী প্রতিষ্ঠান জাতীয় ‘করোনা’ দমন কার্যক্রম থেকে শুধু মুখ ফিরিয়েই নেয়নি, অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় এসব হাসপাতালে আসা নতুন রোগীদের পর্যন্ত ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। করোনা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট সংকট যাতে মহামারির আকার ধারণ করতে না পারে সে লক্ষ্যে আইইডিসিআর বা অনুরুপ সরকারি প্রতিষ্ঠান/হাসপাতালের ডাক্তার/নার্স/টেকনিশিয়ান, পুলিশ/ সেনা/বিমান/নৌ বাহিনীর বড় বড় নামী দামী হাসপাতালগুলো হতে পারত অন্যতম অবলম্বন। 

লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। বলা যায় অজ্ঞাত শত্রু এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে নির্ভিক প্রত্যয়ে যুদ্ধ করছেন এবং জনগনকে সুরক্ষা দেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূর্তিমান আতংক করোনাভাইরাসের এই মূলোৎপাটন কর্মযজ্ঞে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরেই এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর স্থান সর্বজনবিদিত। যাদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তার/নার্স, উপযুক্ত মেডিকেল ইক্যুইপমেন্টসহ প্রায় সব ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাদি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পিপিই নেই অজুহাত দেখিয়ে তারা নিজেদের অন্দরমহলে গুটিয়ে ফেলেছেন। অপরদিকে দেশের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক দল মানবিকতায় উজ্জীবিত হয়ে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই এ সংকট মোকাবেলায় ঝাপিয়ে পড়েছেন।

‘করোনায় আমি যদি মরে যাই’ আতংক তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। কাজেই প্রশ্ন হচ্ছে, পিপিই প্রস্তুত/সংগ্রহ/ক্রয়ের মত সামর্থ্য কি এসব নামিদামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সত্যিই ছিলনা বা নেই? জাতির ক্রান্তিকালে এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকার এবং জনগনের পাশে নেই--আপামোর জনগন এটি সময় মনে রাখবে।

আসলে দেশে যখন স্বাভাবিক ও অনুকুল পরিবেশ বজায় থাকে তখন এসব নামিদামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট কর্মতৎপর ও সক্রিয় থাকে এবং এ সময় উচ্চহারে ফি আদায় করে থাকে। তখন তাদেরকে উদ্যোমী, সাহসী আর যথেষ্ঠ আন্তরিক হতেও দেখা যায়। কিন্তু এখনতো সর্বত্রই করোনাভাইরাসের বিভীষিকা বিরাজ করছে এবং রয়েছে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু মিছিলে পড়ে যাওয়ার আশংকা। দরদ আর সাহসিকতা দেখানোর সময় মতো এটি নয়, পিঠ প্রদর্শনই এখন সর্বোত্তম উপায়।দেশের পরিস্থিতি আগে স্বাভাবিক হোক,তারপর না হয় জনগনের স্বাস্থ্যসেবায় বেশী বেশী তৎপর আর মানবিক হওয়া যাবে।কিন্তু আল্লাহ না করুক দেশে শেষ পর্যন্ত যদি ব্যাপক হারে স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করছে। তখন সুরক্ষিত গর্তে লুকিয়ে থাকলেও শেষ রক্ষা পাবেন কি?

মনে রাখবেন, ভয়ে লুকিয়ে থাকলে বিপদ কমবে না,বাড়বেই।শেষরক্ষা করতে হলে সম্মিলিত ভাবে সাহসিকতার সাথে বিপদকে মোকাবেলা করার বিকল্প নেই। দেশের মহাদুর্যোগময় এই পরিস্থিতিতে বিপিসিডিওএ (বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন) এর কাছে আমাদের প্রশ্ন: আপনারা নিরব কেন? এই সময় সরকারকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে সরকারের হাত শক্তিশালী করা এবং দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষা করার কার্যক্রমকে আপনাদের পেশা কি সমর্থন করো না? পাশাপাশি বিএএম (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন), এবিপি (অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ান অব বাংলাদেশ) প্রভৃতি ডাক্তারী পেশার সাথে সম্পর্কিত সংগঠনগুলোই বা কতটুকু এগিয়ে এসেছে এই সংকটময় সময়ে?

লেখক: সরকারী চকুরিজীবী

এমএস/