বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত ১২ লাখ, মৃত্যু সাড়ে ৬৪ হাজার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২০ রবিবার
করোনা ভাইরাসের মহামারিতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব- সংগৃহীত
বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের থামছে না প্রকোপ। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা। তিনমাস আগে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে শুরু হওয়া ভাইরাসটিতে সারা বিশ্বে ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছুঁছু ছুঁই।
আজ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল পর্যন্ত এ তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটার। যার অধিংশই ইউরোপীয় ও আমেরিকান নাগরিক। সময় যত গড়াচ্ছে অবস্থা প্রকোট আকার ধারণ করছে। ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার কবলে পড়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ১ হাজার ৯৩৩ জন। অপরদিকে প্রাণ গেছে আরও প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষের। যেখানে মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭১৬ জনে ঠেকেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। যদিও এখনো সংখ্যা কম হলেও প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ ও প্রাণহানির সংখ্যা। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তা প্রকোট আকার ধারণ করেছে। উৎপত্তিস্থলের বাহিরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১১ মার্চ বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বর্তমানে ভাইরাসটিতে সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় সবার ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ তালিকায় ইতালিকে টপকে দুইয়ে ওঠেছে প্রতিবেশী স্পেন। তবে প্রাণহানির সংখ্যায় এগিয়ে ইউরোপীয় ইতালি।
বার্তা সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সর্বোচ্চ আক্রান্তের দেশটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭। অপরদিকে, ১ হাজার ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে দেশটিতে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৫২ জনে।
যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নিউইয়র্ক রাজ্য। গত একদিনে সেখানে ৫শ’র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এতে করে শুধু এই রাজ্যেই মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে গোটা দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ রোগীই এ অঙ্গরাজ্যের। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৫ জনে।
এরপর নিউ জার্সিতে আক্রান্ত ৩৪ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৮৪৬ জন। দেশটিতে সংকটাবস্থা পার করছে প্রবাসীরাও। করোনায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৮ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। যাদের অধিকাংশেই নিউ ইয়র্কে থাকতেন।
করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির দেশ ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৬২ তে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ জনে পৌঁছেছে। মহামারির দেশ হিসেবে বিশ্বের প্রথম কোনো দেশে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়ালো।
করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের দিক থেকে ইতালিকেও ছাড়িয়ে গেছে স্পেন। দেশটিতে গত একদিনে আরও ৬ হাজার ৯৬৯ জনের শরীরে ভাইরাসটির সন্ধান মিলেছে। এতে করে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৬৮। প্রাণহানি ১২ হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে ধারণার চেয়ে প্রাণহানি বাড়ায় লাশের কফিন বানাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে জার্মানিতে হঠাৎ করে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইউরোপের দেশটিতে এক লাফে সংক্রমিতের সংখ্যা ৯৬ হাজারে ঠেকেছে। মারা গেছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪৪ জন।
করোনার প্রকোপে বিপর্যস্ত ফ্রান্সে মারা গেছে ৭ হাজার ৫৬০ জন। যেখানে আক্রান্ত ৯০ হাজারের কাছাকাছি।
আক্রান্ত বেড়েছে দুই মুসলিম দেশ ইরান ও তুরস্কে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ইরানে এখন পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে প্রাণ গেছে ৩ হাজার ৪৫২ জনের। তুরস্কে আক্রান্ত প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫০১ জন।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ৪১ হাজার ৯০৩ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩১৩ জন।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় ভারত। মোদির দেশে ২১ দিনের লকডাউনের মধ্যেই এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৮ জনে। মারা গেছেন ৯৯ জন।
পিছিয়ে নেই ইমরান খানের পাকিস্তানেও। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৮১৮ জন, প্রাণহানি ঘটেছে ৪১ জনের। যা অন্যান্য দিনের থেকে কম।
আর বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার নতুন করে ৯ জনের শরীরে ভাইরাসটির সন্ধান পাওয়া যায়। এতে করে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ জনে ঠেকেছে। মারা গেছেন ৮ জন।
এআই/এমএস/