এগিয়ে চলছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের নির্মাণ
এম হেদায়েত
প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১০:০৬ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২০ রবিবার
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল
মরণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় মানবিক মূল্যবোধ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল। এ লক্ষ্যে আজ রোববার (৫ এপ্রিল) ডা. বিদ্যুত বড়ুয়ার নেতৃত্বে সলিমপুরস্থ নাভানা ব্যাটারি কোম্পানি লিমিটেড-এর কারখানায় নির্মিতব্য চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল-এর অবকাঠামো পরিদর্শন করেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন সিভিল সার্জন মুক্তিযোদ্ধা ডা. মুহাম্মদ সরফরাজ খান চৌধুরী এবং নাভানা ব্যাটারি লিমিটেড’র নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার জোতির্ময়।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া জানান, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষকে মানবিক সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে গত ৩০ মার্চ থেকে এই আপদকালীন চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ব্যক্তিবর্গ ফিল্ড হাসপাতাল-এর অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন। আশা করি, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে পারবো।
তিনি আরো জানান, আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাসপাতালটি প্রথমে ১০ শয্যা থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে ৫০ শয্যা পর্যন্ত চালু করা হবে। এরপরও যদি এখানে রোগীর চিকিৎসা সংকুলান না হয়, সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে ভাটিয়ারী বিএসবিএ হাসপাতালটিও ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম ও সিভিল সার্জন ডাঃ মুহাম্মদ সরফরাজ খান বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডা. বিদ্যুত বড়ুয়ার উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে দাবী করেন। তারা বলেন, এ সময়ে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোগিতা করলে সংকট দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
সলিমপুরস্থ চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া এবং সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলমসহ উপস্থিত সকলে ভাটিয়ারীস্থ বিএসবিএ হাসপাতালটিও পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া তার ফেসবুকে জন প্রতি ১০০ টাকা অনুদান চাওয়ার পর এগিয়ে আসে নাভানা গ্রুপ। এ বিষয়ে ইউরোপ প্রবাসী চিকিৎসক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, করোনার দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রামবাসীর সহায়তা নিয়ে এই ফিল্ড হসপিটাল গড়ে তুলতে চাই। তাই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে এক কোটি টাকার অনুদান সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এতে মানুষ মনে করবে এটা তাদেরই হসপিটাল। মানুষ তার নিজের হসপিটালে চিকিৎসা নিতে আসবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুত বড়ুয়া তার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি বিশেষ পোস্টের মাধ্যমে হাসপাতালের জন্য মানবিক সাহায্যের আবেদন জানান। এ বিষয়ে শনিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ৯ মিনিটে দেয়া ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অর্থের মাঝে যে ভালোবাসা, আন্তরিকতা ও মানবিকতা বিদ্যমান, তার মাঝেই খুঁজে নিচ্ছি হাসপাতাল নির্মাণের প্রাণশক্তি।’
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তিনি লেখেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র চালানো দূরের কথা- ৩ ফুট কাছ থেকেও অস্ত্র দেখেনি কোনদিন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। দেশের প্রয়োজনে তখন কেউ সম্মুখ সমরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, আবার কেউ সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন রসদ জুগিয়েছেন। সম্মুখ সমরে যারা ছিলেন তারা মুক্তিযোদ্ধা হলে পাশাপাশি অন্যরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিরস্মরণীয়। ‘তেমনি করোনা হাসপাতাল নির্মাণের পথে যারা লাইক, কমেন্টস ও শেয়ার দিয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, সবাই করোনা হাসপাতাল নির্মাণের সহযোগী সৈনিক। আমাদের হাসপাতাল, ফিল্ড হাসপাতাল। মানবিক হয়ে পাশে থাকুন।’
উল্লেখ্য, ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’টি গড়ে তোলা হচ্ছে ফৌজদারহাটের সলিমপুরে। নাভানা গ্রুপের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড নামের কারখানার ভেতরে ৬ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দ্বিতল ভবনে ৫০-৬০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালটি গড়ে তোলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া বলেন, নাভানা গ্রুপ এই মানবিক কাজে এগিয়ে এসেছে। তবে মানুষের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদান নিয়েই ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’ গড়ে উঠবে। শুধু করোনা আক্রান্ত রোগী নয়, ভবিষ্যতে সব ধরনের রোগীদেরও এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। হাসপাতালটি সবার জন্যই।
একইসঙ্গে হাসপাতালটিতে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও রাখা হবে। কেবল করোনা নয়, এ হসপিটালে প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া হবে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সন্তান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ছোট ভাই। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা এই চিকিৎসক কাজ করেছেন আন্তর্জাতিকমানের বিভিন্ন হাসপাতালে।
এনএস/