ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ইউরোপের পর এবার এশিয়ায় চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৭ এএম, ৭ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:২০ এএম, ৭ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

কয়েকদিন ধরে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে হু-হু করে বাড়ছিল কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী। সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছিল মৃত্যুর মিছিলও। মৃত্যুর বিভীষিকা ছড়িয়ে সোমবার এ চার দেশেই করোনার দাপট কিছুটা কমেছে। তবে এবার চোখ রাঙাচ্ছে এশিয়ায়।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে ধীরে চলা করোনা এবার দৌড় শুরু করতে যাচ্ছে। ফলে এসব দেশে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

পাশাপাশি দেশগুলোর জনমনে বাড়ছে ভয়। চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দেশটিতে এবার উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জাপানেও হঠাৎ সংক্রমণ বেড়েছে। এ জন্য ছয় মাসের জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী- করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৭৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ। করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে ইতালি।

সেখানে এ পর্যন্ত সাড়ে ১৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি। তবে এত খারাপ খবরের মধ্যেও এবার আশার আলো দেখছে ইতালি। দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। রোববার গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫২৫ জন। ইতালির জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিলভিও ব্রুসাফেরো বলেন, লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা কাজ দিয়েছে।

স্পেনে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৩ হাজার ৫৫ জন। তবে টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। দেশটির সরকার বলছে, চার দিন ধরে প্রাণহানি ধারাবাহিকভাবে কমায় কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তারা। সোমবার সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় স্পেনে নতুন করে আরও ৬৩৭ জন মারা গেছেন। এই সংখ্যা এক সপ্তাহ আগের মৃত্যুর চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

রোববার ফ্রান্সে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৫৭ জন মারা গেছেন, যা আগের দিনের চেয়ে ৮৪ জন কম। ফ্রান্সে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার মানুষ মারা গেছেন, আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে। ইরানে টানা পঞ্চম দিনের মতো মৃতের সংখ্যা কমেছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৩ জন মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজারের মতো।

যুক্তরাজ্যেও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কমেছে। দেশটির রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ব্রিটিশদের সাহস জুগিয়ে বলেছেন, সুদিন আবার ফিরবে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আরও সাত থেকে ১০ দিন পর যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসতে পারে। তারপর সংক্রমণের হার নিম্নগামী হবে।

তবে ইউরোপে পরিস্থিতির উন্নতি দেখা গেলেও ভিন্নচিত্র এশিয়ায়। এ মহাদেশের দেশগুলোতে হু-হু করে বাড়ছে করোনা রোগী। জাপানে রোববার রোগীর সংখ্যা ৩৩৬ জন বেড়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জন শনাক্ত হয়েছে শুধু টোকিওতে। দেশটিতে মোট ৪ হাজারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে মহামারীতে রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসটি চীন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিলেও এবার দেশটিতে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোববার ৩৯ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানায়, ৭৮ জন উপসর্গহীন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৪৭। এ ধরনের রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাদের শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না এবং নিজের অজান্তেই তারা অন্যদের সংক্রমিত করেন।

সিঙ্গাপুরে একদিনে নতুন ১২০ জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণ। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩০৯ জন, মারা গেছেন ৬ জন।

ভারতে এখন প্রতি চার দিনে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দেশটিতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৭৭৮ জন, মৃত্যু ১৩৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩২৭৫ জন। সোমবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮৯ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যে সীমিত আকারে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা ভারতের চেয়ে কম, সেখানে মোট ৩ হাজার ৭৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৯ জন, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২৫৭ জন। থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের, সোমবার মারা গেছেন ৩ জন।

দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২২২০ জন। মালয়েশিয়ায় সর্বমোট মৃত্যু ৬২, সোমবার মারা গেছেন ১ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩৭৯৩ জন। নেপালে ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। বাকিরা এখনও চিকিৎসাধীন। শ্রীলংকায় ১৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩৮ জন।

এমবি/