ট্রাম্পের হুমকিতে কাবু ভারত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার
ম্যালেরিয়া-প্রতিরোধী ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আমেরিকাকে রফতানি না-করা হলে ভারতকে তার ফল ভুগতে হবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নজিরবিহীন ভাষায় এই হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভারত ওই ওষুধ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে তুলে নিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের হানায় যে সব দেশগুলির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ তাদেরকে এরকম ২৬টি ড্রাগ সরবরাহ করা হবে - তবে সেটা করা হবে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়েই।
যেহেতু হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এখন ভারতেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, তাই সেই ওষুধটির রফতানিতে ভারত নিজেও দ্বিধায় ভুগছে বলে তারা অনেকেই মনে করছেন।
বস্তুত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী ওষুধ বলে পরিচিত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা সারা দুনিয়া জুড়েই হঠাৎ করে সাঙ্ঘাতিক বেড়ে গেছে- কারণ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাতেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই ওষুধটি বেশ ভাল কাজ করছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।
এই ওষুধটি ভারতেও বিপুল পরিমাণে কাজে লাগতে পারে, এই বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ড্রাগ রফতানিকারী এই দেশটি গত মাসে আচমকাই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-সহ মোট ২৬টি ড্রাগ রফতানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
এতে প্রচন্ড চটে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি গত বেশ কিছুদিন ধরে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের হয়ে জোরালো সওয়াল করে আসছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোমবারের ব্রিফিংয়ে বলেন, "ভারত যদি এই নিষেধাজ্ঞা না-তোলে তাহলে আমি অবাকই হব, কারণ আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভাল। তারা বহু বছর ধরে আমাদের কাছ থেকে বাণিজ্য সুবিধা নিয়েছে।"
"আমাদের ওষুধের জোগান যাতে পাঠানো হয়, সেটা বলতে আমি রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথাও বলেছি। যদি তারা না-পাঠায় - তাহলে ঠিক আছে, কিন্তু আমরাও সে ক্ষেত্রে পাল্টা আঘাত করব। কেন করব না?"
কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতের দুটি বৃহৎ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, ইপকা ল্যাবরেটরিজ ও জাইডাস ক্যাডিলা আমেরিকার কাছ থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের বিপুল পরিমাণ অর্ডার পেয়েছিল।
ভারতের নিষেধাজ্ঞায় সেই চালান অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি যে এই ভাষায় দিল্লিকে হুমকি দেবেন কূটনৈতিক মহলও তা ভাবতে পারেনি।
আজ মঙ্গলবার এমনিতেই ভারতের ওই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করার কথা ছিল - এবং মি ট্রাম্পের ওই হুঁশিয়ারির ঘন্টাকয়েকের মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়ে দেন, "আমেরিকা-সহ যেসব দেশ করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় বিপন্ন অবস্থানে আছে তাদেরকে ভারত ওই ওষুধ সরবরাহ করবে।"
এদিকে ভারতের ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের মহাপরিচালক ড: বলরাম ভার্গব এর মধ্যেই জানিয়েছেন, ভারতে যে সব ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত আছেন কিংবা বাড়িতেও যদি কেউ করোনা পজিটিভ রোগীর সেবা-শুশ্রূষায় রত থাকেন - শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে তারা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সুপারিশ করছেন।
"আর এই চাহিদা মেটানোর মতো যথেষ্ঠ মজুত ভারতে আছে" বলেও ড: ভার্গব দাবি করেছেন।
যদিও ভারতে পাড়ার ফার্মেসি বা সাধারণ ওষুধের দোকানগুলোতেও এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন অমিল - তার পরেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি ভারতকে একরকম মেনে নিতেই হল।
এই ধরনের ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের যে নানা আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারও আছে, সেটাও এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে স্বীকার করা হল বলে বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন।
ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বহু বছর ধরে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড: স্বাতী মাহেশ্বরী বলছিলেন, "জয়পুরের সওয়াই মান সিং হাসপাতালে যে দুজন কোভিড-পজিটিভ রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়েছে, তাদেরও কিন্তু এই ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়েছিল - সঙ্গে আরও কিছু ড্রাগ।"
"আসলে ক্লোরোকুইন ও তার বিভিন্ন ডেরিভেটিভ ভারতীয় ডাক্তাররা গত সত্তর বছর ধরে প্রেসক্রাইব করে আসছেন - শুধু ম্যালেরিয়া নয়, আরও নানা রোগেও।"
"এই ওষুধটাকে তারা হাতের তালুর মতো চেনেন বলেই এই সঙ্কটের সময় এটা রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের একটা সংশয় কাজ করেছে বলে আমার ধারণা", বলছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারির পর ভারত অবশ্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের মার্কিন চালানে আপাতত আর কোনও বাধা সৃষ্টি করছে না।
তবে তার আগে দেশের অভ্যন্তরীণ ও সেই সঙ্গে নেপাল-বাংলাদেশ-ভুটান-শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর চাহিদা থেকে থাকলে সেটা আগে মেটানো হবে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি
এসি