যাদের বাড়ি ফেরা হয়নি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৫৫ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০২০ বুধবার
স্বপ্নভূমি নামে বেশ পরিচিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়! আয়তনে ১০১ একরের। ক্যাম্পাস ছোট হলেও প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বুনছে এখানে হাজারও স্বপ্নচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিংবা ছুটিতে সবাই বাড়ি ফিরলেও বাড়ি ফেরা হয়না কিছু মানুষের। জীবিকার তাগিদে অনবরত দায়িত্ব পালন করতে হয়। চাইলেও তাদের বাড়ি ফেরা সম্ভব হয় না। পুরো ক্যাম্পাসে যখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই বাসায় নিজ নিজ পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। ঠিক এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নিরবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নিরাপত্তা কর্মীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত। প্রতিদিনেই মরছে হাজার হাজার মানুষ। করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯২ জন। মারা গেছেন ৮৩ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত ২১৮ জন, মারা গেছেন ২০ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে সবাইকে নিজ নিজ বাসায় থাকার জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই যখন বাসায় অবস্থান করছে। যখন পুরো ক্যাম্পাস শূন্যে,নিস্তব্ধ ঠিক তখনই তারা প্রতিনিয়ত দিনক্ষণ গুনছেন কখন এই মহামারি শেষ হবে। আর তাদের পরিবার অপেক্ষা করছেন কখন বাড়ি ফিরবে প্রিয় এই মানুষগুলো।
ক্লাসের ফাঁকে, অবসরে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ব্যস্ত সেই গোলচত্বর, প্রশান্তি পার্ক, শান্তিনিকেতন, নীল দিঘি, হতাশার মোড় আজ বিরান ভূমি। নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কারোরই পদচারণা নেই। খেলাধুলায় পারদর্শী শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ আজ খেলোয়াড়শূন্য, খেলোয়াড়দের নেই কোনো ব্যস্ততা।
শিক্ষার্থীদের আড্ডা, গল্প, গানে মুখরিত সেই প্রশান্তি পার্ক ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, শান্তিনিকেতনের পাশের টং দোকানগুলো জনশূন্য। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপের চুমুকে গিটারের টুংটাং ধ্বনিতে মুখরিত জায়গাগুলো আজ হাহাকার করছে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহ-শিক্ষামূলক কার্যাবলীর সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে মুখরিত সেই অডিটোরিয়াম ভবন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, গোলচত্বর আজ জনশূন্য। নেই কোনো সৃজনশীল কাজের ব্যস্ততা।
আবাসিক হলের চিত্রও একই রকম। হলগুলো ও আজ নীরব, নেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হল, হযরত বিবি খাদিজা হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলগুলো আজ শিক্ষার্থীশূন্য। নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া কারোরই পদচারণা নেই।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটের নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়া (৩১) এর সাথে। গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়িতে। এক সন্তানের বাবা। পরিবারে আছেন মা-বাবা ও তিন ভাই। প্রথমে একটু হাঁসি খুশি ভাবেই কথা বলেন। গল্প ও করেন এর আগে তিনি চাকরিতে থাকা অবস্থায় চট্রগ্রামে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। হঠাৎ নিজের একমাত্র সন্তানের কথা বলতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার। চোখের কোণে জল জমে যায়। নিজ সন্তানকে একবার দেখার অধির আগ্রহ প্রকাশ করেন।
করোনা ভাইরাসের আতংকে নিস্তব্ধ ক্যাম্পাসে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল হলের নিরাপত্তাকর্মী সাইফুল্লাহ শেখের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার ছুটি হলেও আমাদের ছুটি নেই। বাড়ীতে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান সবাই খুবই চিন্তিত। কিছুক্ষণ পরপর বাসা থেকে ফোন আসে, সুস্থ আছি কিনা! মাঝেমধ্যে এই প্রিয়জনদের কথা মনে পড়লে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আর প্রতিদিন হাজারও দুশ্চিন্তা মাথায় তো থাকছেই। এরপরেও দিন শেষে একটাই চাওয়া সবাই সুস্থ ও সুন্দর মতো আবার এই প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসুক।
কেআই/এসি